সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অধিকাংশ জরিপকে ভুল প্রমাণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা যেতে পারে, নির্বাচনের এ ফলাফল বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীত। অনেকেই আশা করেছিল, ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবেন। কিন্তু সেটা হল না। মার্কিন জনগণ যা চেয়েছিল সেটাই হয়েছে। তারা চেয়েছিল পরিবর্তন। গত আট বছর একজন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট দেশ শাসন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরপর তিন মেয়াদ ডেমোক্রেট প্রার্থীর জয়ের রেকর্ড নেই। মার্কিন জনগণ সেই ধারাটিই বজায় রাখল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়কেই বেশি গুরুত্ব দেয়। নির্বাচনে এর বড় প্রভাব পড়ে। ট্রাম্পের জয়ের পেছনে নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ আছে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা সেসব বিশ্লেষণ করবেন। আমরা মার্কিন জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাই। নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম ও অভিবাসীবিরোধী নানা বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ ও মেক্সিকানসহ অভিবাসী জনগোষ্ঠী স্বভাবতই উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১০ লাখ বাংলাদেশী বৈধ বা অবৈধভাবে বসবাস করেন। তারাও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র যে একটি অভিবাসীর দেশ এবং তাদের অবদানেই দেশটি আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এ সত্য অনুধাবন করবেন ট্রাম্প। সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মাবলম্বীর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ভবিষ্যৎ ট্রাম্প প্রশাসন।
বিশ্বব্যাপী মার্কিন নীতির প্রভাব সর্বজনবিদিত। দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে পররাষ্ট্রনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, এটা এক বড় প্রশ্ন। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে রাতারাতি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। দেশটির পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র বিভাগ, পেন্টাগন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল, সর্বোপরি কংগ্রেসের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল। এটি এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে এটিও প্রণিধানযোগ্য, নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত যেসব বিষয় স্থান পেয়েছে, নির্বাচিত হলে স্বভাবতই তিনি সেসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। সেটা কোনো কোনো দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে অপর বৃহৎ শক্তি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে তা স্পষ্ট নয়। গত জানুয়ারিতে নিউইয়র্ক টাইমসকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পক্ষপাতী। এ বক্তব্যের মাঝে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে।
নতুন মার্কিন নেতৃত্বের এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া নীতি কী হবে, আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকব। আমরা চাইব, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বশান্তির অনুকূলে ভূমিকা রাখবে। ক্ষমতার চেয়ার ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল করে তোলে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাকি বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন, এটাই আমরা আশা করি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.