ক্ষমতারোহণের পর ‘তৎক্ষণাৎ’ ২০ থেকে ৩০ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে আমেরিকা ছাড়া করবেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ায় রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের তিনি ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনে জয়ের পর নিজের প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সিবিএস চ্যানেলের ৬০ মিনিটস অনুষ্ঠানে তিনি বলেন নিজের কঠোর অভিবাসন নীতি বাস্তবায়ন করবেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে দেয়াল নির্মাণেও তিনি অনড়। তবে এ দেয়ালের কিছু অংশে থাকবে বেড়া। পাশাপাশি নিজের কট্টর সমর্থকদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, বন্দুক অধিকার, অভিবাসন ও গর্ভপাতের মতো ইস্যুতে তিনি তাদেরকে হতাশ করবেন না। এ সাক্ষাৎকারে অভিবাসন, তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, গর্ভপাত, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ, বর্ণবাদ বৃদ্ধি, ওবামা কেয়ার, সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের বেতন নিয়ে কথা বলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। অনথিভুক্ত অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যা করতে যাচ্ছি তা হলো যারা অপরাধী ও অপরাধের রেকর্ড আছে, গুণ্ডাপাণ্ডা ও মাদক ব্যবসায়ী- এদের সংখ্যা ২০ লাখ বা ৩০ লাখ হতে পারে, এদেরকে আমরা দেশছাড়া করবো অথবা জেলে পুরবো। কিন্তু এদেরকে আমরা দেশছাড়া করতে যাচ্ছি, তারা এখানে অবৈধভাবে বসবাস করছে।’ তবে কিভাবে এ বিপুল পরিমাণ মানুষকে তিনি দেশছাড়া করবেন, তা সপষ্ট নয়। আমেরিকান আইনে, এসব মানুষকে ফেরত পাঠাতে পূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ইতিমধ্যেই আদালতে এসব মামলা জট বেঁধে আছে। তার এ মন্তব্য কংগ্রেসের শীর্ষ রিপাবলিকান হাউস সিপকার পল রায়ানের মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেছিলেন, আমরা গণহারে মানুষকে ফেরত পাঠাচ্ছি না। ট্রাম্প সেটা করবেন না। নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রত্যেক অনিবন্ধিত অভিবাসীকে তিনি ফেরত পাঠাবেন। এদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু এবার তিনি বলছেন, সর্বোচ্চ ৩০ লাখ মানুষকে তিনি ফেরত পাঠাবেন। বিক্ষোভকারীদের প্রতি তিনি বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা এ দেশকে আবারো নিজেদের কব্জায় নেব। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষকে হয়রানি ও ভয় দেখানো হচ্ছে বলে খবরে এসেছে। এসব খবরে তিনি ব্যথিত বলে জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি এটা শুনতে ঘৃণা করি। আমি এসব শুনে খুবই ব্যথিত। যদি এতে কাজ হয়, সেজন্য আমি বলবো। আমি ক্যামেরার দিকে ফিরেই বলছি। এসব বন্ধ করুন।’ সাক্ষাৎকারে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রসঙ্গে তেমন কথা বলেননি তিনি। শুধু বলেছেন, ‘কিছু কিছু এলাকায় বেড়া থাকবে। এটি আমি গ্রহণ করবো। কিন্তু কিছু এলাকায় দেয়ালই সই। আমি এ কাজ খুব ভালো পারি। একে বলে নির্মাণ।’ সুপ্রিম কোর্টে গর্ভপাতবিরোধী বিচারপতি নিয়োগ দেবেন বলে ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তার নিয়োগ করা বিচারপতিরা হবেন ‘জীবনপন্থি’। এর ফলে অনেক অঙ্গরাজ্য গর্ভপাত নিষিদ্ধ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, যেসব নারী গর্ভপাত করাতে চাইবেন, তাদের হয়তো অন্য কোথাও চলে যেতে হবে, অন্য কোনো রাজ্যে। সাক্ষাৎকারে মুসলিম ও অন্যান্য জাতির মানুষের শঙ্কাকে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। অনেক মার্কিন মুসলিম নারী আক্রমণ ও কটূক্তির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ সংখ্যা অকস্মাৎ বেড়ে গেছে। দেশজুড়ে অনেক ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বস্তিকা চিহ্ন দেখা গেছে। কিন্তু ট্রাম্প মনে করেন পক্ষপাতদুষ্ট গণমাধ্যম একে বড় করে তুলে ধরছে। তার ভাষ্য, ‘আমি মনে করি এটা ভয়াবহ জিনিস, যদি ঘটে থাকে। কিন্তু আমি মনে করি গণমাধ্যম একে বড় করে তুলছে, কারণ সোজাভাবে বললে তারা প্রত্যেক ছোট ছোট ঘটনাকে এখন বড় করে তুলবে। এসব হয়তো আগেও ঘটতো। কিন্তু এখন একে আমার সঙ্গে লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’ তবে তার সমর্থকরা যদি এসবের পেছনে জড়িত থাকেন, সেজন্য তাদের প্রতি বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি বলবো, এসব করবেন না। এটা ভয়াবহ। কারণ, আমি এ দেশকে আবার এক করবো। আমি বলছি, এসব বন্ধ করুন। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলছি, বন্ধ করুন।’ সাক্ষাৎকারে তিনি ওবামাকেয়ার বাতিল করার সাম্প্রতিক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতির দুয়েকটি নীতি বহাল রাখার পক্ষে। যদিও নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি একে পুরোপুরি বাতিল করার পক্ষে ছিলেন। তবে তার স্বাস্থ্যসেবা বিল আরো কম খরচের হবে বলে জানান তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের কাছেও তিনি পরামর্শ চাইতে পারেন! যদিও নির্বাচনী প্রচারের সময় তার বিচারের জন্য আলাদা কৌঁসুলি নিয়োগের হুমকি দিয়েছিলেন, সেই অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন- টুইটার থেকে একেবারে সরে যাবেন না তিনি। তবে এখন থেকে তার টুইটার পরিচালিত হবে ‘খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে’। তবে তার আগেই বিক্ষোভকারী ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিষোদগার করে একাধিক টুইট তিনি দিয়ে ফেলেছেন! সিবিএস টিভি চ্যানেলের সিক্সটি সেকেন্ডস অনুষ্ঠানে তিনি আরো ঘোষণা দেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের কাছ থেকে নামমাত্র ১ ডলার বেতন গ্রহণ করবেন। এদিকে রয়টার্সের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যত দ্রুত সম্ভব সরে আসার পথ খুঁজছে ট্রাম্প শিবির। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ভুয়া বিষয়। যদিও বিশ্বের ৯৯ শতাংশেরও বেশি বিজ্ঞানী একমত যে, জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.