প্রায় নয় বছর ধরে বাফুফে সভাপতির পদটি দখলে রেখেছেন কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। প্রায় একই সময় ধরে সাফ সভাপতিও তিনি। তার এই দীর্ঘ সময়ে পুরুষ ফুটবলের সফলতা হাতেগোনা দুই-একটি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। গত বছর আগস্টে সিলেটে অনুষ্ঠিত ওই আসরে শিরোপা জিতে সালাউদ্দিনের স্বপ্নপূরণ করেছিলো শাওন-নিপুরা। তাদের নৈপুণ্যেই প্রথমবারের মতো সাফ সভাপতি হিসেবে দেশকে ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। আগস্টে সাফ শিরোপা জয়ের পরই সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে শুরু হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি বাছাইপর্বের আসর। বাছাইপর্ব শেষে বাড়ি ফেরার সময় নিপু, শাওনদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলা হয়েছিল, ‘এক মাস পরই তোমাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প শুরু হবে, তৈরি থেকো।’ মাসের পর মাস চলে যায়; শাওন-নিপুদের ডাক আসে না। বাফুফে থেকে কোনো প্রকার খোঁজ নেয়া হয়নি তাদের। তাইতো টাইব্রেকারে ভারতের শেষ শট আটকে দিয়ে দেশকে আনন্দের সাগরে ভাসানো সেই ফয়সাল রাগে-অভিমানে ফুটবল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশে। রনি-পারভেজরাও ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়ার কথা ভাবছেন। অথচ শিরোপা জয়ের পর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব প্রাঙ্গণে তাদের ঘিরে কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারই না ফুলঝুরি ছুটিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ্তুআগামী চার বছর ওদের থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই দেবে ফুটবল ফেডারেশন। আমরা এরই মধ্যে ওদের সঙ্গে একটা চুক্তি সই করে ফেলেছি। ওদের জন্য শিগগিরই বিদেশি কোচ আসবে।’ হায়! একটি কথাও যদি রাখতে পারতেন বাফুফে সভাপতি! হয়তো ভুলেই গেছেন! মনে আছে সেদিনের সেই গোলরক্ষক ফয়সালের কথা? টাইব্রেকারে ভারতীয় মিডফিল্ডার সাকলাইন খানের শটটি ঠেকিয়ে যে পুরো দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছিল। সেই ফয়সাল যোগ দিয়েছ পুলিশে। রাগে, অভিমানে নিজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রেখেছে। তার পিতা কিরণ মিয়া জানান, অভাবের সংসার, যেখানে ফয়সালের লেখাপড়ার খরচ, অনুশীলনের খরচ চালানোর সামর্থ্য ছিল না পরিবারটির। তার ওপর ফুটবলে ফয়সালের ভবিষ্যৎটা ছিলো অনিশ্চিত। এছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিলো না। ফয়সালের ফুটবল ছেড়ে দেয়াটা মেনে নিতে পারছেন না তার কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীও। সাফজয়ী এই কোচ জানান, আমার দেখা অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ছিলো ফয়সাল। হয়তো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ও পুলিশে যোগ দিয়েছে। পুলিশে যোগ দিয়ে সুনামগঞ্জের ফয়সাল হয়তো ওর ভবিষ্যৎ খুঁজেছে। কিন্তু অন্যরা? সাফজয়ী ওই দলে ছিলো ২৩ ফুটবলার। যাদের মধ্যে সাদউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম সজীব আছেন ঢাকা আবাহনীতে। যাদের অভিষেকও হয়েছে পেশাদার লীগে। অভিষেক ম্যাচেই গোল করেছেন সিলেটের এই স্ট্রাইকার। সারওয়ার জামান নিপুও শেখ জামালের হয়ে এক প্রকার নিয়মিতও প্রিমিয়ার লীগে। দলটির অধিনায়ক শাওন আছেন ব্রাদার্সে। সেকেন্ড ফেইজে আরামবাগ ক্লাবে যোগ দিয়েছেন খলিল ভূঁইয়া। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপের দল ভিক্টোরিয়ায় আছেন ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান। এদের বাইরে আটজন ফিরে গেছেন বিকেএসপিতে। বাকি দশজন আছেন নিজেদের মতো করে। এদের মধ্যে একজন চাঁপাই নবাবগঞ্জের নূর আলম বলেন, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে। আমাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের লীগ খেলে কোনোভাবে নিজের ফুটবল সত্তাটা টিকিয়ে রেখেছি। রংপুরের পারভেজ বলেন, সবার কথা শুনে মনে হয়েছিলো আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। পরে দেখলাম এসব ফাঁকা বুলি। এসব কারণে হয়তো কোনো একদিন ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে অন্য পেশায় প্রবেশ করবো। ঝিনাইদহের রনি আক্ষেপ করে বলেন, সাফ জিতার পর আমরা মাত্র একটি ব্লেজার পেয়েছিলাম। অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসের পাঁচ লাখ টাকাও আমাদের দেয়া হয়নি। অথচ মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের কতো সংবর্ধনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ফেডারেশন। বাফুফের কথা দিয়ে কথা না রাখার প্রবণতা আর বিমাতাসূলভ আচরণে ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকবেন সম্ভাবনাময় এসব ফুটবলার।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.