নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। এই প্রথমবারের মতো সিটি কর্পোরেশনে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হবে মূলত নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। নানা কারণে এবারের নাসিক নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। প্রথমত, নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তাহলে ফলাফলের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠবে দুই দলের জনপ্রিয়তার বর্তমান অবস্থা। বস্তুত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই দলের জনপ্রিয়তার পারদ কতটা ওঠানামা করেছে তা নির্ভুলভাবে জানা যায়নি। কারণ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল একতরফাভাবে এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কারণে জনমত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হতে পারেনি। আসন্ন নির্বাচনের আরও একটি তাৎপর্য হল, এই নির্বাচনের ওপর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনেকাংশেই নির্ভর করবে এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে তা-ও অনেকটা নির্ধারিত হবে। শাসক দলের উচিত হবে নির্বাচনটিকে যাবতীয় অনিয়ম থেকে মুক্ত রাখা, যাতে এটা প্রমাণ করা যায় যে, দলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের যে দাবি, সেটাকেও অযৌক্তিক প্রমাণ করতে পারবেন। বিএনপিরও উচিত হবে সর্বাত্মক শৃংখলার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়া এবং সরকার সহিংসতার অভিযোগ যাতে তুলতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে দু’দলের নেতৃত্বের। নারায়ণগঞ্জ দলীয় কোন্দলে জর্জরিত একটি এলাকা। বিশেষত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে সহিংসতার প্রশ্নে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি ঝুলে আছে খোদ নির্বাচন কমিশনের সামনে। এই কমিশন এরই মধ্যে বেশ সমালোচনা ও নিন্দা কুড়িয়েছে। সামনে সুযোগ রয়েছে, সেই নিন্দা কাটিয়ে উঠে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার। সম্ভবত এই নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকবে না বর্তমান কমিশনের। সুতরাং ক্ষত সারানোর এই শেষ সুযোগ। শেষটা ভালো করে আগের খারাপগুলো কোনোরকমে ঢাকতে পারে বৈকি কমিশন। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচকমণ্ডলীরও উচিত হবে কমিশনকে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সুযোগ করে দেয়া। বস্তুত একটি সুস্থ নির্বাচনী সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন আমাদের সবার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। উন্নত নির্বাচনী সাংস্কৃতিক চেতনাই পারে কেবল আগামী যে কোনো ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.