ঢাকা: আমার গরুর গাড়িতে সানাই বাজিয়ে… আলতা দেবো শাড়ি দেবো, দেবো ভালোবাসা। না সেই সানাই এখন আর গ্রাম বাংলায় বাজে না। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর গাড়ি দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে। বর্তমান যুগে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যানবাহন আবিষ্কার হওয়ায় এ শিল্প আজ অনেকটা বিলিন হওয়ার উপক্রম। কোথাও দু’একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও তা খুবই নগন্য। এক সময় বিয়েসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো গরুর গাড়ি। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এ শিল্প আজ বিলিন হতে বসেছে। বর্তমানে যুগে গরুর গাড়ি যানবাহনের চেয়ে দ্রুত গতিতে গন্তব্য স্থানে পৌছার বাহন রয়েছে অনেক। তাই লোকজন আর দেরিতে কোন গন্তব্য স্থানে যেতে চায় না। জীবনের চেয়ে সময়ের দাম বেশি মনে করে বর্তমানে যুগে ইঞ্জিন চালিত বিভ্ন্নি বাহনে দ্রুত গতিতে গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে গিয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেকে দুর্ঘটনায় পড়ে অকালে এ পৃথিবির মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আজ থেকে দুই যুগ আগেও মানুষের চলাচলের জন্য এক মাত্র বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। গরুর গাড়িতে বিয়ে হওয়ার আনন্দ ছিল তখন অনেক। কিন্তু এখন বিভ্ন্নি ধরনের আধুনিক যান্ত্রিক বাহন এদেশে চলে আ্সায় গ্রাম বাংলার চির চেনা গরুর গাড়ি আর চোখে পড়ে না। পরানপুর এলাকার আব্দুল লতিফ জানান, এক সময় গরুর গাড়ি ছিল মানুষের চলাচলের এক মাত্র বাহন। বিয়ে, মাঠ থেকে ফসল বাড়িতে আনা নেয়াসহ বিভিন্ন গৃহস্থালী কাজে গরুর গাড়ী ছিল অপরিহার্য্য যান বাহন। কিন্তু আজ দিন বদলের সাথে সাথে মানুষের রুচি পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ আর গরুর গাড়িতে উঠে কোথাও যেতে পছন্দ করে না। আর এই নিরাপদ গরুর গাড়ি যান বহনে চলাফেরা করতে পছন্দ না হওয়ায় ইঞ্জিন চালিত যান বাহনে চলতে গিয়ে অহরহ ঘটছে সমড়ক দুর্ঘটনা। আর এই সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে অনেকে অকালে এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হচ্ছে না ফেরার দেশে। তিনি বলেন, মাঠ থেকে ফসল বাড়ি আনতে হলেও গরুর গাড়ির কোন বিকল্প ছিল না। বর্তমান যুগে এখন আধনিক সব যান্ত্রিক আসায় গরুর গাড়ির জন্য আর অপেক্ষা করতে হয় না কৃষকদের। চারঘাট বাজারে গরুর গাড়ির চাকা তৈরির মিস্ত্রী সুবোধ জানান, দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করে আসছি। কিন্তু বর্তমান যুগে চাকা তৈরি আগের চেয়ে অনেক কম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইতোপুর্বে লোকজনের পথ চলাচলের জন্য এবং জমির ফসল ঘড়ে তুলতে যান বাহন হিসেবে গরুর গাড়ির চাহিদা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু বর্তমান যুগে গরুর গাড়ি যান বাহনের চেয়ে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফসলসহ পথ চলাচলের জন্য আধুনিক যে সকল যন্ত্র এসেছে, তার নিকট গরুর গাড়ি যান বাহন অচল। তাই মানুষ আর সে ভাবে গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করে না, আমার সংসার ভালো ভালো ভাবে চলে না। অনুপমপুর গ্রামের সবুর আলী জানান, আগে বিয়ে মানেই গরুর গাড়ী যান বাহন। বিয়ের আগে থেকেই গাড়ি ঠিক করে রাখা হতো। গরুর গাড়িতে বিয়ে, সে যে কি আনন্দ ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এখন আর গ্রাম বাংলার সেই চির চেনা গরুর গাড়ির ব্যবহার আর নেই। তিনি আরো বলেন, তিন চারটি গরুর গাড়িকে সাজিয়ে বধূ আনতে বর যাচ্ছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ এগুলো উপভোগ করতো। কিন্তু এখন দশ হাত দুরে বিয়ে হলেও মানুষ মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ছাড়া বিয়েই হচ্ছে না। তাই আজ চিরচেনা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর গাড়ির ব্যবহার আজ বিলপ্ত হতে বসেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.