যে কোনো উড়োজাহাজ প্রতিবার উড্ডয়নের আগে বাধ্যতামূলক বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ভিভিআইপি বহনকারী উড়োজাহাজের উড্ডয়নপূর্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশিত। হাঙ্গেরি যাত্রাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনে ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদে জরুরি অবতরণের ঘটনায় যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয় তা হল, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের আগে এর বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছিল কিনা? যে ত্রুটির কারণে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজটিকে জরুরি অবতরণ করাতে হয়েছে, তা উড়োজাহাজ উড্ডয়কালীন সৃষ্টি হয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। কোনো উড়োজাহাজে উড্ডয়নকালীন সামান্য যান্ত্রিক সমস্যা থেকেই বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টির আশংকা থাকে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজের উড্ডয়নপূর্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের যোগ্যতা ও দক্ষতা নতুন করে যাচাই করে দেখা দরকার। একই সঙ্গে যাচাই করে দেখা দরকার উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা। যেসব পাইলটের ট্রেনিংকালীন ফল সন্তোষজনক নয়, সাধারণভাবে ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এয়ারক্রাফটের দুই পাইলটের ট্রেনিংকালীন ফল সন্তোষজনক ছিল না। কিছু শর্ত শিথিল করে ওই দুই পাইলটকে পাস করানো হয়েছিল। প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজের পাইলটের যোগ্যতার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আপস করেছিল কেন? উল্লিখিত ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এ রহস্য উদঘাটনে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
শুধু প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজ নয়, বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা আগেও ঘটেছে। গত সোমবারও বিমানের ঢাকা-কলকাতা রুটের একটি ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার পর ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে। পাইলট গন্তব্য পরিবর্তন করে পুনরায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ কয়েক ঘণ্টা মেরামত করে সচল করে উড়োজাহাজটি। দ্বিতীয় দফা ফ্লাইটটি কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার পর আবারও এতে ত্রুটি ধরা পড়ে। পাইলট ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট নিয়ে কলকাতায় অবতরণের নির্দেশনা না পেয়ে পুনরায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। এসব ঘটনা বিমানের ওপর যাত্রীদের আস্থাহীনতার কারণ হতে পারে। এতে জাতীয় পতাকাবাহী এ সংস্থার যে ক্ষতি হবে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। বস্তুত বিমানের ভাবমূর্তি ইতিমধ্যেই ক্ষুণœ হয়েছে নানা কারণে। এ সংস্থার নানা পর্যায়ে দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়টি বহুল আলোচিত। যাত্রী আকর্ষণের মাধ্যমে বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। বাংলাদেশ বিমানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার নানা ত্রুটি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু অব্যবস্থা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আজও নেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের দিকে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি এ বিষয়টি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আবার।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.