যুগান্তরের কয়েক পর্বে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার যে বেহাল দশা ফুটে উঠেছে, তা মেনে নেয়া যায় না। হাসপাতালগুলোয় আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে, রয়েছে দক্ষ-প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সের সংকটও। পাশাপাশি জনবল ও ওষুধ সংকটসহ বিরাজ করছে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা। এর অতিরিক্ত একশ্রেণীর দালালের দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই। হাসপাতালের লোকজনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা এসব দালালের হাতে প্রায়ই নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের, যা মেনে নেয়া যায় না। আসলে দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় এত বেশি সমস্যা ও অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। সুষ্ঠু চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হলে জনবল সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান করা উচিত। রাজধানী, বিভাগীয় শহর ও জেলার বাইরে উপজেলা পর্যায়েও স্বাস্থ্যসেবার চিত্র করুণ। উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, ওষুধ ও খাবার নেই। অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও অপারেশন থিয়েটার থাকলেও শুধু সার্জনের অভাবে যন্ত্রপাতিগুলো বাক্সবন্দি রয়েছে। এতে যে উপজেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে আশার প্রদীপ হয়ে মানুষের মনে যে প্রতিষ্ঠানটির অধিষ্ঠান- তার নাম হাসপাতাল। দেশে আজকাল সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনেক নামি-দামি বেসরকারি হাসপাতালও গড়ে উঠেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ দক্ষ ও প্রথিতযশা চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা প্রদানের কথা শোনা যায়। এসব হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিক হলেও যথেষ্ট ব্যয়ববহুল। এ ব্যয়ভার বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। অভিযোগ রয়েছে, কাঁড়ি-কাঁড়ি অর্থ খরচ করার পরও বেসরকারি হাসপাতালে অনেক সময় কাক্সিক্ষত মানের সেবা পাওয়া যায় না। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখের ছানি অপসারণ করতে গিয়ে ১৩ জনের অন্ধ হয়ে যাওয়া ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বলে দাবিদার একটি কর্পোরেট হাসপাতালে অপারেশনের দীর্ঘদিন পর এক রোগীর পেট থেকে গজব্যান্ডেজ উদ্ধারের ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল। বস্তুত চিকিৎসাসেবা প্রদানের কাজকে মহৎ দায়িত্ব ভাবা হলেও যুগ-পরিবর্তনের হাওয়ায় দৃশ্যপট আমূল পাল্টে গেছে। চিকিৎসাসেবা এখন পরিণত হয়েছে চিকিৎসা পণ্যে। সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু লোক, যাদের অর্থ-বিত্ত ও প্রাচুর্যের কমতি নেই- সাধারণত তারাই ব্যয়বহুল হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়। বিত্তশালীদের মধ্যে কেউ কেউ উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও পাড়ি জমায়। সে ভিন্ন কথা। মোটের ওপর প্রতিদিন অজস্র রোগী আরোগ্য লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে ভিড় জমায়। তাদের মধ্যে দরিদ্র শ্রেণীর লোকজনই বেশি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তারা যদি প্রয়োজনীয় সেবা না পায়, তাহলে দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক রোগীকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা না পেলে তাদের অসহায় বোধ করাটাই স্বাভাবিক। রোগীদের এ অসহায়ত্ব ঘোচানোর দায়িত্ব থেকে সরকার মুক্ত নয়। বিভিন্ন অজুহাতের দোহাই দিয়ে সরকার এ দায়িত্ব কিছুতেই এড়াতে পারে না। রোগাক্রান্ত সাধারণ মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার আকাক্সক্ষার মূল্য দেয়া জরুরি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.