আজকে পৃথিবীতে দুটি কাহিনি ঘটছে—একটি বিশ্বায়নের, অন্যটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কাহিনি। একদিকে পৃথিবীর নানান শক্তিশালী দেশে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির উত্থান আত্মসত্তার রাজনীতিকে উসকে দিচ্ছে—কে মুসলমান, কেমন মুসলমান, হিন্দুত্ব বলতে কী বোঝায়—এসব প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে। বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ ও নিম্নবর্গের ইতিহাসের অন্যতম পুরোধা দীপেশ চক্রবর্তী তাঁর সময়ের সংকটকে এভাবেই তুলে ধরলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী অবশ্য মানব জাতির সংকটের আরেকটি দিকও তুলে ধরেন, যাকে তিনি বলছেন ‘মানুষী চিন্তা’। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষ তার নিজের জীবদ্দশায় নিজের স্থান, সময়, আদর্শ, চিন্তা ও প্রয়োজন নিয়েই বেশি ভাবছে। আর এসব ভাবনা থেকে সে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াচ্ছে, এতে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। পৃথিবীর ৯৫ শতাংশ স্থান এখন মানুষ ও তার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির দেওয়া বক্তৃতায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের নানান সংকটের মূলে ইতিহাস বিকৃতিকে দায়ী করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ইতিহাস বিকৃতির যে ধারা সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাবেই দেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব গড়ে উঠেছে। যে কারণে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কয়েকটি অল্প বয়সী যুবক ঠান্ডা মাথায় খুন করে নাশতা খেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির দেওয়া বক্তৃতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাধ্যতামূলক পাঠ্য করা হচ্ছে বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ইতিহাসবিষয়ক গবেষণায় সহায়তা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে ‘পরিচয়ের রাজনীতি: দক্ষিণ এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিত’ বিষয়ে আলোচনা পর্বে প্রাচীন ভারত নিয়ে আলোচনা করেন ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুনাল চক্রবর্তী। তাঁর আলোচনার ওপরে মতামত দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন। মধ্যযুগে ভারতের জাঠ জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড ইটন ও আধুনিক ভারতের ইতিহাসে জাত-পাত ও লিঙ্গ পরিচয় নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তনিকা সরকার। এই দুজনের বক্তব্যের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম ও ইতিহাসের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন।
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমিত সরকার, ইতিহাসবিদ ও এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো আবদুল মমিন চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এম মোফাখ্খারুল ইসলামকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য দেন ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশা ইসলাম নাঈম ও সভাপতি অধ্যাপক শরিফ উল্লাহ ভূঁইয়া।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.