উপজাতি নৃ-গোষ্ঠির গারোদের নিজস্ব সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব হলো নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব। ২৪ নবেম্বর রোববার সকাল থেকে ওয়ানগালা উৎসবে মেতে উঠে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ও দেশের ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড় এলাকার গারো উপজাতিরা।
ওয়ানগালা উৎসব আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকায় বছরে মাত্র একটি ফসল জুম(ধান) চাষ হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’ কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।
এর কারন হিসেবে জানা গেছে, গারোদের ওই শস্য দেবতা এক সময় পাহাড়ি এলাকার গারোদের হাতে কিছু শস্য দিয়ে বলেছিল, ‘তোমরা এটা রোপন কর তাতে তোমাদের আহারের সংস্থান হবে এবং তোমরা যে শস্য পাবে তা থেকে সামান্য কিছু শস্য আমার নামে উৎসর্গ করবে।’এরপর থেকেই গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছে।
এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খৃষ্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন। এসময় সামাজিক নানা আয়োজনসহ ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানাদিও পালন করা হয়।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিয়মনগর খ্রীষ্টান ধর্মপল্লীর নিয়ন্ত্রনে জেলার সদর উপজেলাসহ শ্রীবরর্দী, ঝিনাইগাতী এবং জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জ উপজেলার গারো সমাজের ৪৭টি গ্রাম রয়েছে।
ওইসব গ্রমের প্রায় ২২ হাজার খৃষ্টান ধর্মাবলম্বি গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। মরিয়মনগর ধর্মপল্লীতে এ ওয়ানগালা উৎসবে খ্রীষ্টান গারোরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পড়ে এসে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল।
এছাড়া এবার মরিয়ম নগরের এ ওয়ানগালা উৎসবটি ২৮ বছরে পা দিয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। ফলে গারোদের মাঝে উৎসবের আমেজটা ছিল অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশী।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খৃষ্ট ভক্ত এবং গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, মাতাবেং ও আরেং নামে ১২ টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় মরিয়মনগর হাইস্কুল মাঠে রোববার সকাল সারে ৮টায় তক্কাদানের মাধ্যমে শুরু করা হয় আনুষ্ঠানিক ওয়ানগালা উৎসব। এরপর খ্রীষ্ট পর্ব, মিশা, ফসল উৎসর্গ, ধর্মীয় আলোচনা ও গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পড়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক এবং দুপুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘নক গাদ্দা’ বা ফসল উৎসর্গ ও প্রীতি ভোজের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া বিকেলে মরিয়মনগর হাইস্কুল মাঠে বিবাহিত ও অবিবাহিতদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং রাতে নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরী করা গারো ভাষায় ‘চু’ (মদ) পান করে দল বেধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মালিকদের কাছ থেকে দান আদায় করার মধ্যদিয়ে ওয়ানগালার আনুষ্ঠিকতা শেষ করা হবে।
অপরদিকে ওয়ানগালা উৎসব উপলক্ষ্যে মিশনের পাশে বসেছিল জমজমাট মেলা। মেলায় গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোষাকসহ শিশুদের নানা রকমের খেলনা বিক্রি করা হয়। ফলে এখানে গারো শিশু ও যুবক-যুবতিরা বিভিন্ন পসড়ার দোকানে তাদের পছন্দের জিনিস কিনতে ভির জমায়।
ওয়ানগালা উৎসবে জেলাসহ জেলার বাইরে থেকে আসা গারো এবং তাদের আত্মিয়রা একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা সাক্ষাত হওয়ায় তাদের মাঝে অনেকটা বড় দিনের উৎসবের মতো আনন্দ উপভোগ করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.