চট্টগ্রাম কাস্টমসে সংরক্ষিত কিছু স্টিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৬৫টি গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন নথি পাওয়া গেছে চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্ট কারখানায়। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘আল আমিন মেরিটাইম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফ্যাশন’ নামের কারখানার একটি আলমারিতে নথিগুলোর সন্ধান পায় শুল্ক গোয়েন্দা দল।
শুল্ক ফাঁকির একটি অভিযোগ তদন্ত করতে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে অবস্থিত কারখানাটিতে গিয়েছিলেন শুল্ক গোয়েন্দারা।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চ আদালতে আমদানি-সংক্রান্ত কোনো মামলা ঝুলিয়ে রাখতে বা তামাদি করাতে ফাইলগুলো কাস্টমস থেকে গায়েব করানো হতে পারে। এই ‘পদ্ধতি’ শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার একটি উপায় বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো কাস্টমস থেকে গায়েব হয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি জড়িত, যা সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
জানতে চাইলে অভিযান পরিচালনায় থাকা চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত দলের উপপরিচালক এস এম শামীমুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে ৬৫টি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর নথি বা ফাইলের সন্ধান মিলেছে। নথি বা ফাইলগুলোর বেশির ভাগই কাস্টমসের ৮(এ) গ্রুপের অধীন আয়রন ও স্টিল গ্রুপের। ’
শামীমুর রহমান বলেন, ‘কর ফাঁকি বা বড় কোনো অনিয়ম-সংক্রান্ত মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নথি তলব করা হলে যাতে সরবরাহ করা না যায় সে জন্য নথিগুলো গায়েব করা হতে পারে। অথবা কোনো অনিয়মের অংশ হিসেবে এটা করা হতে পারে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও বিষয়টি তদন্ত করা হবে। ’
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট আমদানি শাখা ৮(এ) গ্রুপের ডেপুটি কমিশনার চপল চাকমা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শোনার পর আমরা বিষয়টি জানতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুল্ক গোয়েন্দাকে চিঠি দিয়েছি। উত্তর পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব। ’ তিনিও স্বীকার করেন, এ ধরনের ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া সত্যিই উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে আল আমিন মেরিটাইম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফ্যাশনের মালিক মোহাম্মদ আল আমিন ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া গোপন নথিগুলোর মধ্যে ১১টি ব্যাংক গ্যারান্টি-সংক্রান্ত, ৪৩টি বিচারাধীন বিভিন্ন মামলার এবং ১২টি নথি শুল্কায়ন ও অন্যান্য-সংক্রান্ত। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, এসব নথি কী করে তাঁর কার্যালয়ে গেল, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কারখানা মালিক। এ ধরনের ঘটনা সরকারি নথিপত্রের নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকি।
মইনুল খান বলেন, এর সঙ্গে কারা জড়িত, নথিগুলোর সঙ্গে কী পরিমাণ রাজস্ব ও ব্যাংক গ্যারান্টি জড়িত তা বিস্তারিত যাচাইয়ে সময়ের প্রয়োজন। যাচাই করে বিস্তারিত জানানো হবে।
অভিযোগ রয়েছে, আমদানি-সংক্রান্ত কোনো চালান আটক করার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিকারকরা উচ্চ আদালতে মামলা করেন। এতে ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য চালানটি খালাস হলেও মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। এসব মামলার শুনানির সময় উচ্চ আদালত থেকে নথি চাওয়া হলে কাস্টমস থেকে নথি গায়েব হওয়ার অনেক নজির রয়েছে। এতে মামলা আরো দীর্ঘায়িত হয়, একপর্যায়ে মামলা তামাদি হয়ে যায়। এতে রাজস্ব পরিশোধ করতে না হওয়ায় আমদানিকারকরা শেষমেশ লাভবান হন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.