নিজ বাসায় নজিরবিহীনভাবে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। নতুন বছরের প্রথম দিনেই সব ক’টি পত্রিকার সংবাদ শিরোনামে একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার খবর জনমনে আতংক তৈরি করেছে বৈকি। যেখানে এমপির মতো উচ্চ মর্যাদার একজন ভিআইপিকে নিজ বাসার ভেতরে হত্যার শিকার হতে হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা যে কতটা হুমকির মুখে তা খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে লক্ষ্য করে করা গুলিতে শিপ্রা কুণ্ডু হত্যার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, বছরের শেষ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এমপির বাসায় দেখা করতে আসে তিন যুবক। কথার ফাঁকে অতর্কিতে এমপিকে গুলি করে পালিয়ে যায় তারা। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি স্থিতিশীল একটি বছরের শেষ দিন কী উদ্দেশ্য নিয়ে মারাত্মক এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হল। এর পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রাথমিকভাবে এমপি লিটন হত্যার পেছনে জামায়াত-বিএনপির হাত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আমাদের মত হচ্ছে, সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। সম্ভাব্য সব ক’টি সূত্র ধরে সঠিক কারণ ও দায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি লিটনের খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। কেবল সরকারদলীয় এমপি বলে নয়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেডএ মাহমুদ ডনকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে নিহত শিপ্রা কুণ্ডুর পরিবারের জন্যও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পূজার ফুল কিনতে গিয়ে প্রাণ হারান শিপ্রা। এমপি লিটন ও শিপ্রা কুণ্ডুর হত্যার মধ্যে মিল রয়েছে। দুটি হত্যাকাণ্ডেই দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে হেলমেট ও মাফলার পেঁচিয়ে এসেছে- যাতে তাদের চেনা না যায়। তারপরও এমপির বাসা ও খুলনার সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্ত করতে হবে। বছরের প্রথম দিন হত্যাকাণ্ড দুটির খবর এসেছে বিধায় সারা বছর এর বিচারের দিকে মানুষের নজর থাকবে অবশ্যই। আশার কথা হচ্ছে, এরই মধ্যে এমপি লিটন হত্যায় সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, এমপির খুনিদের ধরতে গিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না হয়, প্রকৃত দোষীর বাইরে নির্দোষ কাউকে হয়রানি করা না হয়। আইনের উদ্দেশ্য যেমন অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা, তেমনই নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা বা হয়রানির শিকার না হয়- তাও নিশ্চিত করা। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন এমপি লিটনের খুনিদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গ্রেফতারের চেষ্টা করবে এবং সন্দেহভাজন কোনো আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণনাশের শিকার হবে না। বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ অনেক আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। নতুন বছরে এমন কোনো ঘটনা কাম্য হতে পারে না। জীবন রক্ষার অধিকার মানুষের অন্যতম মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। সরকার ভিআইপিসহ সব মানুষের নিরাপত্তায় যৌক্তিক উদ্যোগ নেবে- নতুন বছরে এমনটাই প্রত্যাশা। সরকার যদি দুটি হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের বিচার নিশ্চিত ও জননিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ নেয়, তবে বছরের শেষ দিনের দুর্ঘটনা দুটিকে মানুষ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.