নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেপিয়ারের এ মাঠেই হয় সবচেয়ে বেশি রান। ১৮০-২০০ রানও নাকি এখানে নিরাপদ নয়। কিন্তু আজ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল ভুল…সবই ভুল। ম্যাকলিন পার্কের উইকেটে ব্যাটিং করা আসলে খুব কঠিন। ব্যাটিং-স্বর্গ হিসেবে যে উইকেটের পরিচয়, সেখানে ৮ উইকেট হারিয়ে টেনেটুনে ১৪১ রান করলে এমন মনে হতে বাধ্য। ম্যাচের ফলাফল এরপর কি হতে পারে সেটা খেলা শেষ হওয়ার আগেই অনুমান করা গেছে। ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ড জিতেছে ৬ উইকেটে। বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময় বলার মতো ঘটনা আছে হাতে গোনা। মোস্তাফিজুর রহমানের দু-একটি ভালো বলে ‘ইশশ…’ করে ওঠা আর আয়েশি ফিল্ডিংয়ের কারণে ফিল্ডারদের ‘হাফ চান্স’ হাতছাড়া করা। এর বাইরে নিউজিল্যান্ডের সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। অপরাজিত ৭৩ রান করে স্বাগতিক অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বলতে গেলে একাই বের করে নিয়েছেন ম্যাচ। পঞ্চম উইকেটে তার আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের ৮১ রানের জুটিতেই দুই ওভার বাকি থাকতেই খেলা শেষ। উইকেটে বাউন্স ছিল স্বাভাবিক, ব্যাটে বল এসেছে শট খেলার প্রলোভন জাগিয়ে। তেমন মুভমেন্টও ছিল না। কিন্তু শট নির্বাচনে বিচক্ষণতা তো থাকতে হবে! ফুলটস বলে ক্যাচ দিয়ে আসলে উইকেট ঘাসের হলেই কি আর সিমেন্টের হলেই কি! নিউজিল্যান্ডের দুই অভিষিক্ত খেলোয়াড়ই এই সুযোগে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন ৫ উইকেট। বেন হুইলার দুটি ও লকি ফার্গুসন তিনটি। ফার্গুসনের প্রথম দুই উইকেট আবার সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকারকে পর পর ফিরিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই বলে পর পর দুই উইকেট এর আগে নিয়েছিলেন কেবল অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্যাসপ্রোভিজ। তাই বলে এমনটি ভাবার কারণ নেই যে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা ভয়ংকর বল করেছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিংটাই হয়েছে ভুলে ভরা। আবারও অদ্ভুত সব শট আর বাজে সব আউটে ব্যাটিং-স্বর্গে ধুঁকেছে তারা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ম্যাট হেনরির অফ স্টাম্পের ওপরের বলটা কবজি ঘুরিয়ে লেগ সাইডে খেলতে গেলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস, কট বিহাইন্ড। তামিম হুইলারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে লং লেগে ক্যাচ। সাব্বির তো ক্যাচ তুলে দিলেন ফুলটস বলেই। ফার্গুসনের পরের বলটা অবশ্য ভালো ছিল। ১৪৮ কিমি গতির বল, আউট সুইংও ছিল কিছুটা। উইকেটে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সৌম্যর ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়ে গালিতে দাঁড়ানো অ্যান্ডারসনের হাতে। ৩০ রানে চার উইকেট নেই। ম্যাকলিন পার্কের ব্যাটিং-স্বর্গ তখন ‘বধ্যভূমি’ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। মাহমুদউল্লাহ তবু আশা জাগিয়েছিলেন। সাত নম্বরে নেমে তিন ছক্কা আর তিন বাউন্ডারিতে ৪৭ বলে ৫২ রানের ইনিংসটি দিয়ে নিউজিল্যান্ডের দর্শকদেরও যথেষ্ট হাততালি পেলেন। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে মাত্র ৪ রান করে একটু যেন গুটিয়ে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে খোলস ছেড়ে বের হতে খুব একটা সময় নেননি তিনি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৩৭ ও মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৩২ রানের দুই জুটির সৌজন্যে মাহমুদউল্লাহই কিছুটা পথে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের ইনিংস। ২০ তম ওভারে আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তার লড়াই করে যাওয়া ‘সাবাসি’ পেল স্থানীয় দর্শকদেরও। এ ছাড়া তরুণ মোসাদ্দেকের ১৭ বলে ২০ রানের ইনিংসে মারা দুটি ছক্কাও বেশ বিনোদনদায়ী ছিল। প্রথমটি স্যান্টনারের ফুলটসে। লেগ স্টাম্প থেকে একটু বেরিয়ে মারা সে ছক্কাটি গেছে মিড উইকেট দিয়ে। পরের ওভারের প্রথম বলে ফার্গুসনকে কাভারের ওপর দিয়ে মারা দ্বিতীয় ছক্কাটিতেই অবশ্য বেশি আগ্রাসী মনে হয়েছে মোসাদ্দেককে। তবে ম্যাকলিন পার্কে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে এসব যথেষ্ট ছিল না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.