* সোমবার জুরিখে দেওয়া হবে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড’। জানতে চাই, আপনি কী কী মানদণ্ডে একজন ফুটবলারকে সেরা হিসেবে মূল্যায়ন করেন?
হোসে মরিনহো: সত্যি বলতে, আমি ফুটবলে ব্যক্তিগত পুরস্কারের খুব বড় ভক্ত নই। দলগত এই খেলায় হার-জিত যা-ই হোক, সেটা দলের। খেলোয়াড়েরা দলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নন। তবে সংবাদমাধ্যম বা সমর্থকেরা ব্যাপারটা পছন্দ করেন। কোচরা মনে হয় না এত পছন্দ করেন। তবে সংবাদমাধ্যম বা সমর্থকদের পছন্দের গুরুত্ব আছে। এ কারণে আমি এটার একেবারে বিরুদ্ধেও নই। কিছু খেলোয়াড় তো আছেনই যাঁরা তাঁদের প্রতিভা দিয়ে দলকে, সতীর্থকে আরও ভালো বানাতে পারেন। এ ধরনের খেলোয়াড়কে আমি বিশেষ মনে করি।
* ২০১০ সালে আপনি ফিফার বর্ষসেরা কোচ হয়েছিলেন। ওই স্বীকৃতির মূল্য কতটুকু আপনার কাছে?
মরিনহো: অবশ্যই ওটা সম্মানের। ওটাই ছিল কোচদের জন্য ফিফার পক্ষ থেকে প্রথম স্বীকৃতি। তবে আমি আবারও বলতে চাই, আমি দলগত সাফল্যে বিশ্বাস করি। ২০১০ আমার বছর ছিল না। ওটার কৃতিত্ব একা মরিনহোর ছিল না। ইন্টারের ‘ট্রেবল’ জেতার ওই মৌসুমটা ছিল ইন্টারের।
* এবার সেরা কোচের দৌড়ে ক্লদিও রানিয়েরি, জিনেদিন জিদান আর ফার্নান্দো সান্তোস আছেন। আপনি কাকে বেছে নেবেন?
মরিনহো: তিনজনই এটার দাবিদার। কারণ তিনজনই দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। এরা তিনজনই আমার বন্ধু। যে কেউ জিতলেই আমি খুশি হব। রানিয়েরি তো রূপকথাই লিখেছেন। ফার্নান্দো পর্তুগালের স্বপ্ন সত্যি করেছেন। জিদানের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়টাও তো দুর্দান্ত ব্যাপার।
* এই প্রথমবার ফিফা পুরস্কারে সমর্থকদেরও মতামত নেওয়া হচ্ছে। ২৫ শতাংশ ভোট দেবেন সমর্থকেরা। এ ধরনের সিদ্ধান্তে সমর্থকদের মতামত নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মরিনহো: সমর্থকেরা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সমর্থকদের কারণেই তো ফুটবল এত সুন্দর এবং এ গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলা। তবে সমর্থকেরা যখন ভোট দেন, তাঁদের প্রিয় দল বা প্রিয় খেলোয়াড়কেই দেন। তার মানে যে ক্লাবের সমর্থক যত বেশি, তাদের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। আমি এটা বলছি, কারণ আমি চারটি ভিন্ন দেশে কাজ করেছি। সেখানকার সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকদের দেখেছি। সবাই যাঁর যাঁর ক্লাবের প্রতি দুর্বল।
* এখনকার ফুটবলের সঙ্গে ২০০০ সালের ফুটবলের তুলনা করলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কী পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন?
মরিনহো: আসলে এভাবে সময় ধরে তুলনা করা কঠিন। অনেকে বিতর্ক করেন—এখনকার ফুটবল অনেক গতিশীল। হ্যাঁ, এটা সত্যি। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি, এখন বল অনেক হালকা, বুট আরও ভালো। এখনকার অনুশীলনপদ্ধতিও অনেক বৈজ্ঞানিক। এখন খেলোয়াড়েরা অনেক বেশি ম্যাচ খেলে, বিশ্রাম কম পায়। আবার এটাও সত্যি, এখন ক্লাবগুলোর সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। চোট থেকে সেরা ওঠার প্রক্রিয়াও অনেক দ্রুত হয়েছে। আমি বিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় বিশ্বাসী, একই সঙ্গে অতীতকেও শ্রদ্ধা করি।
* পর্তুগালের জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি। অথচ ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দেশটি বিশ্ব ফুটবলকে অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় ও কোচ উপহার দিয়েছে। রহস্য কী?
মরিনহো: এটা অবিশ্বাস্য। ইউসেবিও, লুইস ফিগো, ক্রিস্টিয়ানোর রোনালদোর মতো খেলোয়াড় পেয়েছি আমরা। কোচ হিসেবে আমি এসেছি। আমরা সবাই শীর্ষ পর্যায়ে সাফল্য ও পুরস্কার পেয়েছি। হয়তো ফার্নান্দোও (সান্তোস) পাবে। বেনফিকা ও পোর্তো ইউরোপের সেরা হয়েছে। পর্তুগালও ইউরো জিতেছে। আটলান্টিকের কোলঘেঁষা দেশটির জন্য এটা দারুণ ব্যাপার। হয়তো ফুটবলের প্রতি আমাদের গভীর অনুরাগই সাফল্যের রহস্য।
* আপনি ক্যারিয়ারে যেসব খেলোয়াড়কে কোচিং করিয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে সেরা মরিনহো একাদশ বেছে নিতে বললে কারা থাকবেন?
মরিনহো: এই প্রশ্নটার উত্তর কখনোই দিতে চাইনি, চাইবও না। এত এত খেলোয়াড়, কাকে বাদ দিয়ে কার নাম বলব! ভিতর বাইয়া, পিওতর চেক, হুলিও সিজার—এদের মধ্যে থেকে আমি কীভাবে একজনকে বেছে নেব? হোর্হে কস্তা, রিকার্ডো কারভালহো, মার্কো মাতেরাজ্জি, লুসিও, ওয়াল্টার স্যামুয়েল, জন টেরি—কাকে নেব বলুন তো! মাইকেল এসিয়েন, ওয়েসলি স্নাইডার, নেমানিয়া মাতিচ, কসতিনহা, ম্যানিচে, জাবি আলোনসো, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড—একজনকে কীভাবে বেছে নেওয়া যায়? আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না। কারণ যারা আমার দলে খেলেছে আমি তাদের কাউকেই কখনো ভুলতে পারব না।
* ফুটবলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কোচ বা খেলোয়াড়দের যুক্ত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মরিনহো: খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এটা ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর একটা দারুণ সিদ্ধান্ত। কিংবদন্তি এসব খেলোয়াড় আর কোচদের নিয়েই ফুটবলের ইতিহাস। এতে বোঝা যায় ফিফা সভাপতি খেলোয়াড় ও কোচদের কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
* বিশ্বকাপে দল বাড়ানোর ব্যাপারে আপনার মত কী?
মরিনহো: আমি পুরোপুরি পক্ষে। যদিও বিশ্বকাপে দল বাড়া মানে, একটা ক্লাবের কোচ হিসেবে যদি দেখি—খেলা বাড়বে, ছুটি কমবে, প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির জন্য সময় কম পাওয়া যাবে। কিন্তু সমালোচক ও বিশ্লেষকদের এটাও মাথায় রাখতে হবে—বিশ্বকাপ বড় হওয়া মানে একটা সামাজিক আয়োজন আরও বড় হচ্ছে। বেশি দেশ জড়াচ্ছে, বেশি বিনিয়োগ, অবকাঠামোর উন্নতি। সেটা বয়সভিত্তিক ফুটবলের কাজে লাগবে। বেশি দেশ থাকা মানে উন্মাদনা বাড়বে। আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা এক হবে, সৌহার্দ্য বাড়বে। এটা তো একটা বৈশ্বিক আয়োজন।
* ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তি নিয়ে আপনার কী মত?
মরিনহো: আমাদের এটা দরকার। রেফারিদের প্রযুক্তির সাহায্য দরকার যাতে তাঁরা আরও নির্ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এতে তাঁরাও আরও নিরাপদ থাকবেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.