উচ্চতায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। বলে দারুণ গতি। শুরুর দিকে টেস্ট ক্রিকেটেই তাঁর সম্ভাবনা বেশি দেখেছিল সবাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাসকিন আহমেদের! ক্যারিয়ারের শুরুতেই চোটে পড়ে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট থেকেই সরে গেলেন দূরে। অবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পৌনে তিন বছর পর টেস্ট অভিষেকের দোরগোড়ায় ২১ বছর বয়সী এই পেসার। কাল বেসিন রিজার্ভে সংবাদ সম্মেলনে জানালেন সেই রোমাঞ্চের কথা— * টেস্ট অভিষেক নিয়ে কতটা রোমাঞ্চিত? তাসকিন: এটা স্বপ্ন পূরণের মতো। যদি আমার টেস্ট অভিষেক হয়, আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হবে। গত তিন বছরে যে কয়টি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেছি, দেখা যেত ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হলেই আমি চলে যেতাম। এবার আল্লাহর রহমতে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। যদি আমার খেলার সুযোগ হয়, নিজের সেরাটাই দেব। * বেসিন রিজার্ভের উইকেট দেখে নিশ্চয়ই খুব খুশি… তাসকিন আহমেদ: বোলাররা উইকেট দেখে খুব খুশি। সবুজ ও শক্ত উইকেট। বোলিংয়ের জন্য ভালো। আমারও ভালো লাগছে। এখানে বোলিং করাটা আমরা উপভোগ করব। * আপনি তো এক ম্যাচে ৪ ওভার বা সর্বোচ্চ ১০ ওভার বল করে অভ্যস্ত। টেস্টে অনেকগুলো স্পেল করতে হবে, অনেক বড় সেশন ধরে বল করবেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা তৈরি? তাসকিন: টেস্ট দলে সুযোগ পেতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাকে। বিসিবি থেকে শুরু করে দলের স্টাফরা—সবাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার জন্য আলাদা প্রোগ্রাম পর্যন্ত করা হয়েছে। সেগুলো অনুসরণ করে বোলিং করার ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছি। কিছু অনুশীলন ম্যাচও খেলেছি। ফিটনেসের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো বলেই সুযোগটা এসেছে। এখন চ্যালেঞ্জ এটাই, যেন সামনেও দলে সুযোগ পেয়ে ধারাবাহিকভাবে টেস্ট খেলতে পারি। * প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অনেক কম খেলেছেন। এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা আছে? টেস্টে তো মাঠে থাকা বা খেলার পরিমাণ অনেক বেশি… তাসকিন: সত্যি বলতে কি, এটা নিয়ে আমি একদমই চিন্তিত নই। আমি যদি একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলতাম, সেখানেও আমাকে ১৫-২০ ওভার বল করা লাগত এবং তখনো সেরা বোলিংটাই করতে চাইতাম। কাজেই আমি মাত্র ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি, অন্যরা বেশি খেলেছে…এটা নিয়ে অতটা চিন্তিত নই। এটা কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না। আমি মাঠে এক শ ভাগ দিয়ে বল করার চেষ্টা করব এবং মাঠের বাইরে নিজের যত্ন নেব।’ * টেস্টে লাল বলে বোলিংয়ের প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছেন? তাসকিন: এমনও দিন গেছে যে নেটে নতুন বল, পুরোনো বলে ১২-১৫ ওভার বল করেছি। লাল বলে সুইং করানো শিখছি এবং আমার বিশ্বাস টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে আমি আরও অনেক কিছু শিখতে পারব। * নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে অভিষেক হবে। পেস বোলার হিসেবে নিজেকে কতটা সৌভাগ্যবান মনে করছেন? তাসকিন: সৌভাগ্যবান তো অবশ্যই। নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে প্রথম টেস্ট খেলব। তবে নিউজিল্যান্ডে না হয়ে এটা অন্য যেকোনো জায়গায় হলেও নিজেকে সৌভাগ্যবানই ভাবতাম। কারণ টেস্ট অভিষেক হচ্ছে, এটাই অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। নিউজিল্যান্ড বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ। নিজেদের মাঠে ওরা যেকোনো দলকেই চাপে রাখে। তবে আমাদের বোলাররা ঠিকভাবে বল করতে পারলে নিউজিল্যান্ডের জন্যও কঠিন হবে। * ওয়েলিংটনে অনেক বাতাস। বোলার, ব্যাটসম্যানদের জন্য এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং? তাসকিন: বাতাসের সুবিধা যেমন আছে, তেমন অসুবিধাও আছে। বাতাসের কারণেই বল অনেক সময় সুইং করে। আবার বাতাসের উল্টো দিক থেকে বল করতে অনেক সময় কষ্ট হয়। কাজেই দুটোই আছে। যে যত আগে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে, সে তত ভালো পারফর্ম করতে পারবে। * নিউজিল্যান্ডের পেসারদের সঙ্গে বাংলাদেশের পেসারদের অভিজ্ঞতার পার্থক্য কতটা ভূমিকা রাখতে পারে সিরিজে? আপনাদের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ কতটা সাহায্য করছেন এই ব্যাপারে? তাসকিন: এটা ঠিক যে ওদের যেসব ফাস্ট বোলার; সাউদি, বোল্ট এবং আরও যারা আছে, সবাই অনেক টেস্ট ম্যাচ খেলেছে এবং অনেক সাফল্যও তাদের আছে। কিন্তু একসময় ওরাও আমাদের মতোই ছিল। কোর্টনি ওয়ালশ কিংবদন্তি। তাঁর কাছ থেকে যতটুকু পারব শিখব। তিনিও যথেষ্ট শেখাচ্ছেন আমাদের। * টেস্ট অভিষেকের আগে দলের কে আপনাকে সবচেয়ে বেশি উত্সাহ দিচ্ছেন? তাসকিন: দলের সবাই আমাকে অনেক সাহায্য করছে। সতীর্থরা অনেক কিছু বোঝাচ্ছে। সবাই দুষ্টুমি করে…বলে, কি রে! টেস্ট খেলবি! আমারও ভালো লাগছে কারণ এটা একটা স্বপ্ন। দলে যাঁরা আছেন বা কোচিং স্টাফ যাঁরা আছেন, সবাই যাঁর যাঁর জায়গা থেকে বিভিন্ন জিনিস বোঝানোর চেষ্টা করছেন। সবাই-ই অনেক সাহায্য করছেন। এদিক দিয়ে আমি খুব ভাগ্যবান। * টেস্টে বোলারদের আক্রমণাত্মক হওয়ার অনেক সুযোগ থাকে। আপনার কী পরিকল্পনা? তাসকিন: এখানে যে রকম উইকেট, গত কয়েকটি ম্যাচ যে ধরনের ছিল, এখানে তার চেয়েও হয়তো বাড়তি একটু মুভমেন্ট থাকবে। এরা পেস বলটা খুব ভালোই খেলে। কারণ পেসের বিপক্ষে খেলে এরা অভ্যস্ত। আমি যেহেতু ফাস্ট বোলার, আক্রমণাত্মক থাকতেই হবে। তবে লাইন-লেংথ, সুইংয়েও একটু মনোযোগী হতে হবে। শুধু আক্রমণাত্মক হয়ে এদিক-সেদিক বল করলে লাভ হবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.