বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণের উল্লেখযোগ্য দিক হল, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষেই নির্বাচন হবে ঘোষণা দিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিতব্য নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রেখে সব রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী এর আগেও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত সংলাপে তাকে বলেছেন, তিনি চান আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক এবং তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষেই একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর যে সদিচ্ছা রয়েছে, তা-ও বোঝা গেছে। এখন একটাই প্রশ্ন, তার আশাবাদ ও সদিচ্ছার বাস্তব রূপটি কেমন হবে? নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করেছে। আমরা আশা করতে চাই, রাষ্ট্রপতি সেসব আলোচনার ভিত্তিতে এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, যা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। আমরা বলব, রাষ্ট্রপতি যে কমিশন গঠন করবেন, তা রাজনৈতিক সব পক্ষই মেনে নেবে। এর অন্যথা হলে রাজনীতিতে জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, এটা অতি সহজ কথা যে, নির্বাচন কমিশন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই কিংবা সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলেই যে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা। এক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, সরকারি দল বিশেষত দলটির সভাপতি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচনের সময়ও প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তার সদিচ্ছার ওপর নির্বাচনের সুষ্ঠুতা বহুলাংশে নির্ভর করবে। এককথায় সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং সর্বোপরি নির্বাচকমণ্ডলী যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে আন্তরিক থাকে, তাহলে দেশে-বিদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনোই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনে সব পক্ষই নির্বাচন কমিশনকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সমঝোতার আভাস দেননি বলে জাতি হতাশ হয়েছে। আমরা বলব, নির্বাচনের এখনও দুই বছর বাকি, কোনো ইস্যুতে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন দেখা দিলে সেই প্রয়োজন মেটাতে প্রয়াস নেয়া যেতে পারে অবশ্যই। বস্তুত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের আগেও প্রধানমন্ত্রী সমঝোতার কিছু প্রস্তাব করেছিলেন, যা তিনি বৃহস্পতিবারের ভাষণেও উল্লেখ করেছেন। বিএনপি তখন সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এখন যেহেতু পরিস্থিতি আগের মতো নেই, তাই দু’পক্ষই অনায়াসে কোনো অমীমাংসিত ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছার প্রয়াস নিতে পারে। আমাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীও সমঝোতার পথেই এগোতে চান। আগামী নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে এটিই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.