ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এবারের প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান তিনটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আগামী এক দশক বৈশ্বিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। এগুলো হল- অর্থনৈতিক অসাম্য, সামাজিক মেরুকরণ ও ঘনীভূত পরিবেশ ঝুঁকি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দৌড়ে আমাদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য ও সামাজিক মেরুকরণ সাধারণ মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না গেলে ২০১৭ সালে এ ঝুঁকি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১০ বছর আগে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা ব্যাপক বেকারত্বের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে বেড়েছে সামাজিক অসাম্য। ডব্লিউইএফের এ পর্যবেক্ষণ অমূলক নয়। বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য যে ক্রমেই বাড়ছে তা বিভিন্ন সংগঠনের জরিপে উঠে আসছে। এ বৈষম্য কত ব্যাপক, তা আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বোঝা যায়। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আট ব্যক্তির হাতে যত সম্পদ আছে তার পরিমাণ পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান। এটি উদ্বেগের বিষয়ই বটে। এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে মূলত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির ঘাত-প্রতিঘাত প্রায় সব দেশের ওপরই পড়ে। বিশ্বমন্দার প্রভাব কমবেশি সারাবিশ্বেই পড়েছিল। মন্দার একপর্যায়ে এ দেশেও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। এখনও বিশ্ব সেই মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কাজেই চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি কেমন যাবে, তার ওপর আমাদের অর্থনীতিরও ভালো-মন্দ অনেকাংশে নির্ভর করবে। সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবণতাগুলোর দিকে আমাদের রাখতে হবে সতর্ক দৃষ্টি। পূর্বাভাস বুঝে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ডব্লিউইএফের সমন্বিত প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ৭৯টি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের ওপরে। তবে এজন্য আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। এ দেশে আয় বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার সত্ত্বেও এর তেমন সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষের আয় বাড়বে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি হতাশাজনক। বিনিয়োগে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে স্থবিরতা। গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়া এর বড় কারণ। ব্যাংক ঋণে সুদের হারও কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমেনি। এসব বিষয় উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করছে। এসব দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। এ দেশের জনগণের সামর্থ্য রয়েছে, মনোবল রয়েছে। শুধু তাদের জন্য দরজাটা খুলে দেয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, নতুন বছর বিশ্ব অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ আমাদেরও মোকাবেলা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের পথে বিদ্যমান বাধাগুলো অপসারণ করা জরুরি। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে, রফতানি আয় বাড়বে, নিরবচ্ছিন্ন থাকবে প্রবৃদ্ধি। বিনিয়োগে স্থবিরতা না কাটলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হবে। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটাবে, এটাই কাম্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.