যে কোনো সমস্যা ও সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে সর্বজনীন, স্বীকৃত কর্মপন্থা হল পারস্পরিক আলোচনা ও সংলাপ। দেশের বিরাজিত রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই- তা বলাই বাহুল্য। তারপরও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহল থেকে আসা সংলাপের তাগিদ সত্ত্বেও সরকারি বা বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ফলে বহু প্রাণহানিসহ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে দেশ ও জাতিকে। এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলগুলোর চলমান সংলাপের শেষের দিকে এসে খোদ রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পরিক সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতির এ পরামর্শকে আমলে না নেয়ার কোনো উপায় নেই। কেবল রাষ্ট্রপ্রধানের পরামর্শ বলে নয়, জাতির বৃহৎ স্বার্থে দলগুলোকে স্বপ্রণোদিত হয়ে সংলাপে বসতে হবে। মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও সংলাপে দলগুলোর দেয়া বিভিন্ন প্রস্তাব পর্যালোচনা করেই পরামর্শটি দিয়েছেন। ফলে সব দলের উচিত হবে কোনো ধরনের গড়িমসি ও হেলাফেলা না করে দ্রুত নিজেদের মধ্যে কার্যকর একটি সংলাপের পথ খুঁজে বের করা। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনীতি মানবসেবার এক মহান ব্রত এবং বিশ্বজুড়ে তা সেভাবেই চর্চা করছেন রাজনীতিবিদরা। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে রাজনীতিকে ক্ষমতা ভোগ ও নিজেদের আখের গোছানোর পথ হিসেবেই ভাবা হয়। এমনকি অনেক রাজনীতিবিদের আচরণে মনে হয় গণতন্ত্র মানে হচ্ছে নিজের মতকে সবার ওপর চাপিয়ে দেয়া। অন্যথায় তাদের মধ্যে ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ মনোভাব থাকার কথা ছিল না। আমাদের প্রত্যাশা, বর্তমান যুগে ‘অমুকের সঙ্গে আলোচনা নয়’ ‘ওরা খুনির দল’ এসব অনাবশ্যক কথা পরিহার করে জনগণের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। রাষ্ট্রপতির সংলাপের পরামর্শে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসবে তারা। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ থেকেই উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মনে রাখা দরকার, চলমান সংলাপ ও রাষ্ট্রপতির এ সংক্রান্ত পরামর্শ কেবল ইসি গঠনকে কেন্দ্র করে। এখানেই যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় তবে সামনে সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের মতো বড় ইস্যুতে সংঘাতের আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। চলমান সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে ও নিজেদের দাবির প্রতিফলন দেখা না গেলে এরই মধ্যে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একমত পোষণ করে আমরা বলতে চাই আন্দোলনের হুমকি দিয়ে নয়, সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের দাবি পূরণে এগিয়ে আসুক দলগুলো। পাশাপাশি সরকারকেও সংলাপের পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবেশ যথেষ্ট শান্ত ও স্থিতিশীল আছে বলে ধরে নেয়া যায়। সাধারণ মানুষ চায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবসময় শান্ত ও স্থিতিশীল থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোর গোঁড়ামি ও স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ কাম্য হতে পারে না। তাছাড়া অস্থিতিশীলতা সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল, সর্বোপরি অর্থনীতির সর্বনাশ বয়ে আনবে- তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, সংবিধানে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইসি গঠনে এখনও কোনো আইন তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া দরকার। দলগুলো একমত হলে আইন তৈরিও সহজ হবে। নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির পরামর্শে সাড়া দিয়ে নজির স্থাপন করবে দলগুলো- এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.