মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ শুধু তার নিজ দেশ নয়, সারা বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ শপথের মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। বিশ্বব্যাপী মার্কিন নীতির প্রভাব সর্বজনবিদিত। ক্ষমতার পালাবদলে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, এটা এক বড় প্রশ্ন। নির্বাচনের আগে তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। যদিও অভিজ্ঞতা বলে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে রাতারাতি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ দেশটির পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র বিভাগ, পেন্টাগন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল, সর্বোপরি কংগ্রেসের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল।
তবে এটিও প্রণিধানযোগ্য, নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত যেসব বিষয় স্থান পেয়েছে, নির্বাচিত হলে স্বভাবতই তিনি সেসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। সেটা কোনো কোনো দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে অপর বৃহৎ শক্তি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে তা স্পষ্ট নয়। গত বছর জানুয়ারিতে নিউইয়র্ক টাইমসকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পক্ষপাতী। এ বক্তব্যের মাঝে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে।
নতুন মার্কিন নেতৃত্বের এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ানীতি কী হবে, আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকব। ট্রাম্পের সীমান্ত শুল্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আরও বেশি শুল্ক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে দেশের রফতানি বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে। আমরা চাইব, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি বাণিজ্য সহযোগিতা ও বিশ্বশান্তির অনুকূলে ভূমিকা রাখবে।
ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বেগের কারণ দেখছেন তার নিজ দেশের জনগণও। কারণ সরকারি দায়িত্ব পালনের পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই। তেমন কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই তার। তিনি অতীতে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনের কোনো অভিজ্ঞতাও ট্রাম্পের নেই। বস্তুত ব্যবসার বাইরে অন্য কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই। ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। মন্ত্রিসভার সদস্যদের অধিকাংশই হয় কোটিপতি ব্যবসায়ী, নয়তো সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল। অর্থাৎ একটি অনভিজ্ঞ প্রশাসন নিয়ে একজন অনভিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট বিশ্বকে ‘নেতৃত্ব’ দেয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প মুসলিম ও অভিবাসীবিরোধী নানা বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ ও মেক্সিকানসহ অভিবাসী জনগোষ্ঠী স্বভাবতই উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১০ লাখ বাংলাদেশী বৈধ বা অবৈধভাবে বসবাস করেন। তারাও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র যে একটি অভিবাসীর দেশ এবং তাদের অবদানেই দেশটি আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এ সত্য অনুধাবন করবেন ট্রাম্প। সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মাবলম্বীর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ভবিষ্যৎ ট্রাম্প প্রশাসন। ক্ষমতার চেয়ার ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল করে তোলে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাকি বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন, এটাই আমরা আশা করি। তার প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.