খুব জানতে ইচ্ছা করছে, মা! তুমি কেমন আছ? জানতে চাইলেই তুমি একগাল হেসে দিয়ে বলবে, খুব ভালো আছ। তোমার সকল কষ্টগুলো তুমি কি করে হাসির দ্বারা আড়াল করে ফেলো? তবুও জানিতো মা, সন্তানকে দূরে রেখে তুমি একদন্ডও ভালো নাই। প্রতি মূহুর্তে শুধু চিন্তা করছো কেমন করে কাটছে তোমার বুকের মানিকের সময়। তোমায় যতই বলি দুশ্চিন্তা করোনা, আমার ভালো যাচ্ছে দিনগুলো, তারপরেও তুমি আমায় নিয়ে ভাবো সারাক্ষণ। কি করছি, খাচ্ছি কিনা, নিচ্ছি কিনা শরীরের যত্ন, খুব বেশি রাত জাগছি কিনা, হলো কিনা শরীর খারাপ-এই সব রাজ্যের ভাবনা। জানি মা, আমায় রেখে তুমি আজও ভালো কিছু খেতে শিখোনি। ভালো খাবারটুকু থালায় নিয়ে আবার তুলে রাখো এই ভেবে যে, তোমার সোনামানিক কি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। যতই বলি, মা আমি খুব ভালো আছি তবুও তুমি এ কথায় যেন সন্দেহ পোষণ করো। এ তো আমার প্রতি তোমার চিরায়ত ভালোবাসার প্রকাশ মা। আমার জন্য শুভ কামনা করার তরে তোমার মত নিঃস্বার্থ আর কে আছে ধরাতে মা? তুমি আমার জন্যেই বেঁচে থাকবে চিরকাল। বলো মা থাকবে তো ?
……
ওমা, সেই দিনগুলোর কথা মনে আছে, যখন তোমায় খুব কষ্ট দিতাম। জানি, সেদিনগুলোর কথা তুমি মনে রাখোনি। আমার দোষগুলো সবার কাছ থেকে লুকিয়ে সব নিজের কাঁধে চাপিয়ে নিতে। সেই শীতের রাতে যখন প্রস্রাবে বিছানা ভিজিয়ে ফেলতাম তখন তুমি, ভেজা জায়গায় তোমার পিঠ চাপিয়ে আমায় তোমার বুকে ওপর পরম যত্নে জড়িয়ে রাখতে। মধ্যরাতে যখন ট্যা ট্যা করে কেঁদে বাবার ঘুমের বিরক্তির কারণ হতাম তখন তুমি তোমার ঘুমকে জলাঞ্জলি দিয়ে, আমায় কোলে নিয়ে সারা ঘরে হেঁটে বেড়াতে। সেই ছোটবেলায় একবার যখন এলার্জিতে আমার সারা শরীরে প্রায় পঁচন ধরেছিলো, সেই সময়টায় ঘৃণায় যখন কেউ আমায় কোলে নিতে চাইতে না অথচ তুমি কোল থেকে নামাতেই চাইতে না। কেমনে পারতে মা? তোমার কি ঘৃণাবোধ ছিল না? সেই ছোট্টবেলা থেকে আজও আমার অসুস্থতায় রাতের পর রাত পাশে বসে ঘুমহীন চোখে কাটিয়ে দিতে আর বিড় বিড় করে শুধু প্রার্থণা করতে। মা! তোমার কি ক্লান্তি বলে কিছুই নেই? মা আমার কথা বলা, হাঁটতে শেখা, বড় হওয়া, মানুষ হওয়া-এর সবটা জুড়েই মা শুধু তোমার অবদান, শুধুই তোমার।
…..
মা জননী, গায়ে-পায়ে লম্বা চওড়া হয়েছি বটে কিন্তু তোমার কাছে সেই ছোট্টটি রয়ে গেছি আজও। হাতে তুলে খাইয়ে দেয়া, গোসলের সময় হাত-পা পরিষ্কার করে দেয়া, বিছানা ঘুছিয়ে মশারী খাটিয়ে দেয়াসহ আজও সকল কাজগুলো তুমিই একা হাতে করে দাও। বিশ্বাস করো মা, ও কাজগুলো আজ আমি বেশ ভালোভাবেই পারি কিন্তু তোমার করে দেয়ায় যে তৃপ্তি পাই তা আমার কাছে স্বর্গের সুখের চেয়েও বেশি পাওয়া। ভাত মেখে খাওয়ার মত যথেষ্ট বয়স আমার হয়েছে মা কিন্তু তুমি মাখিয়ে দিলে ভাতগুলো যেন অমৃতের স্বাদ লাভ করে। আমার জামা-কাপড়গুলো আমিই পরিষ্কার করতে পারি মা, কিন্তু তোমার ভরসায় রেখে দেই শুধু শরীর থেকে তোমার ছোঁয়া হারাতে চাইনা বলে।
জন্মদাত্রী মা, মাঝে মাঝে মনে হয় তোমায় কষ্ট দিচ্ছি খুব। বার্ধক্য তোমায় ভর করেছে সেই কবেই। ভেবে পাইনা মা, তারপরেও তুমি এতকিছু হাসিমুখে কি করে করো? তোমার কি কষ্ট হয়না মা? নাকি মায়েদের কষ্ট থাকতে হয়না! তোমার জন্য কি করতে পারবো মা আজও জানিনা তবে প্রার্থণা করি, পৃথিবীর সবটুকু ভালোর সংমিশ্রনে ভালো থাকে যেন আমার মা। আমার সুস্থতার বিনিময়ে, জীবনের বিনিময়ে হলেও যেন স্রষ্টা সুস্থ ও জীবিত রাখেন আমার মাকে। মাকে হাসিমুখে দেখতে চাই সারাজীবনজুড়ে। মায়ের হাসি অম্লান থাকুক পৃথিবীর খুশির তরে। মাকে নিয়ে রচিত হওয়া আমার পৃথিবীটাকে সুন্দর-সজ্জিত করে দিয়েছে আমার মা। ভালো থাকো প্রিয় মা। মায়ের পরকালের জান্নাত প্রাপ্তির পূর্বে মায়ের পৃথিবীটাকে তার জন্য জান্নাতে পরিণত করতে চাই। প্রার্থণা করো, শুধু এটুকু যেন পারি।
তোমার সন্তান হতে পেরে সত্যিই চিরধন্য আমি, মা ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.