বিশ্ব অর্থনীতির উন্নত সাত দেশের (জি-সেভেন) শীর্ষ নেতারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, মধ্যবিত্তের জীবনমান উন্নয়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং ধনীদের কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জাপানের ইসে-শিমায় বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া জি-সেভেন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয় বলে জানিয়েছে জাপান টাইমস। উদ্বোধনী সেশন শেষে স্বাগতিক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, বৈঠকে বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতির চলমান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা গুরুত্ব পেয়েছে। এটা সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে অভিহিত করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে উদ্বোধনী এ সেশনের আলোচনা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জাপানি কর্মকর্তা বলেন, শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান অর্থনীতি নিয়ে হতাশা বাড়ছে। বিশ্বের দেশে দেশে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে স্বীকার করে, এ অবস্থার পরিবর্তনে দ্রুত পদক্ষেপ নেযার কথা বলেন। আলোচনায় বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্তের জীবনমানের দুর্দশা উঠে এলেও শিল্পোন্নত সাত দেশের কারা কত ব্যয় করবে সে বিষয়ে একমত হননি শীর্ষ নেতারা। এতে শীর্ষ উন্নত সাত দেশের নীতিগত অবস্থানে ব্যাপক পার্থক্যের বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে বিনিয়োগ বাড়াতে স্বাগতিক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যে আহ্বান জানিয়েছে তাতে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জার্মানি ও ব্রিটেন। সম্মেলনে উপস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অবস্থা পরিবর্তনে ‘বুদ্ধিদীপ্ত ব্যয়’ বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে। মধ্যবিত্তের অবস্থা পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতে ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছে ইইউ প্রতিনিধিরা। জাপানের একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটা বড় অগ্রগতি’। শীর্ষ এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি এবং এবারের আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যোগ দেন। এবারের জি সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলন শেষে আগামী রোববার (২৯ এপ্রিল) দেশের উদ্দেশে রওয়ানা করবেন তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী স্বাগতিক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং শেষে শনিবার দুপুরে নাগোয়া থেকে টোকিও যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং জাপানের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংস্থা জেইটিআর এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, পাপুয়া নিউগিনি ও শাদের সরকার প্রধানরা আউটরিচ বৈঠকে এশিয়া ও আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ এর প্রধানরাও। বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের সম্মেলনের পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জোটের বাইরে থেকে বিভিন্ন দেশকে আলাদা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.