এছাড়া এখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখা যায় বান্দরবান শহর আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা মনোরম এই পর্যটন কেন্দ্রে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যোগ করা হয়েছে একটি রিসোর্ট। এখন থেকে তাই এখানে বেড়ানোর পাশাপাশি পর্যটকরা রাত যাপনের সুযোগ পাবেন।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়া এলাকা। সেখানকার পাহাড়ের চূড়ায় বান্দরবান জেলা প্রশাসন গড়ে তোলে আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্র। নাম দেয় নীলাচল পর্যটক কমপ্লেক্স। এখানে পাহাড়ের গায়ে গায়ে পর্যটকদের জন্য আছে নানান ধরনের ব্যবস্থা।
শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে। এ পথে প্রায় তিন কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে তাই পৌঁছুতে হয়। মাঝে পথের দুই পাশে ছোট একটি পাড়ায় দেখা যাবে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস।
নীলাচলে সম্প্রতি নতুন কয়েকটি জায়গা তৈরি করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। এখানকার টিকেট ঘরের পাশে ‘ঝুলন্ত নীলা’ থেকে শুরু করে ক্রমশ নীচের দিকে আরও কয়েকটি বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন’ পয়েন্ট।
পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা। একেক জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও একেক রকম।
তবে মূল নীলাচলের সৌন্দর্য অনেক বেশি। এখান থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় আরও ভালোভাবে।
ঢাকা থেকে সপরিবার বেড়াতে আসা আকরাম কবীর জানালেন, একদিন আগেই তিনি বেড়াতে গিয়েছিলেন নীলগিরি। আজ এলেন নীলাচলে। তার কাছে এই জায়গা বেশি ভালো লেগেছে। তার মতে এখান থেকে বেশ ভালোভাবে চারপাশের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের একেবারে চূড়ায় পর্যটকদের জন্য আছে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। নীলাচলের মূল পাহাড়ের শিখরের চারপাশেই মনোরম স্থাপনা শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে এসব কেন্দ্র। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা। আর একেক দিক থেকে পাহাড়ের দৃশ্যও একেক রকম। বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে এখানে চলে মেঘের খেলা। কিছুক্ষণ পর পরই দূর পাহাড় থেকে মেঘের ভেলা ভেসে আসে নীলাচলের চূড়ায়। চারপাশ ঢেকে ফেলে শীতল নরম পরশে।
নীলাচলে বাড়তি আকর্ষণ হল এখানকার রিসোর্ট। নাম নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এ জায়গায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনুমতি আছে। তবে রিসোর্টের অতিথিদের জন্য সর্বক্ষণই খোলা এ জায়গা।
রিসোর্টের পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জাকির হোসেন জানালেন, নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে তিনটি কটেজে ছয়টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। এছাড়া রিসোর্টের অতিথিদের জন্য ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগের মোবাইল নম্বর ০১৭৭৭৭৬৫৭৮৯।
কীভাবে যাবেন
রাজধানী থেকে সড়ক পথে সরাসরি বান্দরবানে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন ও বিআরটিসির এসি বাস যায়। ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা।
এছাড়া এসব জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন, সৌদিয়া পরিবহন, এস আলম পরিবহন, ইউনিক সার্ভিসের নন এসি বাসও যায় বান্দরবান। ভাড়া ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা।
এছাড়া সড়ক, রেল কিংবা আকাশ পথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পৌঁছে সেখান থেকেও সহজেই যাওয়া যায় বান্দরবান। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে পূরবী, পূর্বানী পরিবহনের বাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলাচল করে। ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য ভাড়ায় পাওয়া যায় অটো রিকশা, চাঁদের গাড়ি (খোলা জিপ) ও জিপ। দলের আকার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বাহনটি ভাড়া নিতে হবে।
অবস্থানের সময় অনুযায়ী নীলাচলে যাওয়া আসার জন্য অটো রিকশার ভাড়া পড়বে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। আর চাঁদের গাড়ি কিংবা জিপ গাড়ির ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
নীলাচলে যেতে সড়কের টোল পরিশোধ করতে হয়। অটো রিকশা ৩০ টাকা, জিপ ৬০ টাকা। পর্যটন কমপ্লেক্সে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। পর্যটকরা সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নীলাচলে অবস্থান করতে পারবেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.