মানবতাবিরোধী অপরাধ
তীব্র সমালোচনার পর অবশেষে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট বাতিল করল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
সম্প্রতি রাজউকের নিয়মিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে চিঠি ইস্যুসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজউকের সদস্য আবদুল হাই জানান, পাঁচটি অনিয়মের কারণে মতিউর রহমান নিজামীর প্লট বাতিল করা হয়েছে। আর কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজধানীতে সরকারি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতা আমীর মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় বহু কোটি টাকা দামের এ তিন প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা চিহ্নিত ব্যক্তিদের ‘দেশসেবায় বিশেষ অবদানের’ জন্য সরকারি প্লট দেয়া নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ও ক্ষোভ ছিল জনমনে।
নিজামীর নামে বনানীতে পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ অনিয়মের মাধ্যমে। তার প্লট বরাদ্দ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পদে পদে নিয়ম লঙ্ঘন করার প্রমাণ পেয়েছে রাজউক। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার জানান, দু’জন যুদ্ধাপরাধীর নামের রাজউকের প্লট বাতিল করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদের প্লটও বাতিল করা হবে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে সংস্থাটির বোর্ড সভার এজেন্ডা ছিল রাজাকার নিজামী ও সাঈদীর প্লট বাতিল করার বিষয়ে। ২০০৬ সালের ২১ মে রাজউকের বোর্ড সভায় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে পাঁচ কাঠার একটি প্লট দেয়া হয়।
বনানীর ১৮ নম্বর সড়কের ৬০ নম্বর প্লটটি ১৯৯৫ সালে আজিজুর রহিমের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, যা নিময়বহির্ভূতভাবে বাতিল করে নিজামীকে দেয়া হয়। নিজামী প্লটটি বরাদ্দ পাওয়ার পর জামায়াত নেতাদের পরিচালিত মিশন ডেভেলপার লিমিটেডের নামে আমমোক্তারনামা দেন, যা রাজউকের নিয়মের লংঘন।
কর্মকর্তার যে স্বাক্ষরে আজিজুর রহিমের বরাদ্দ বাতিল করা হয় সেটিও জাল বলে তদন্তে ধরা পড়ে। তদন্তে নিজামী ও তার নিয়োজিত ব্যক্তি পরস্পর যোগসাজশে রাজউক থেকে প্লটের মূল ফাইল গায়েব করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
মিশন ডেভেলপারকে নিজামী আমমোক্তারনামা দিয়ে, তা বাতিল না করেই নিজে তড়িঘড়ি করে ইমারত নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন, যা বিধিবহির্ভূত। এছাড়া আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব অভিযোগে নিজামীর প্লট বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া সাঈদীকে ২০০১ সালে পূর্বাচল থেকে পাঁচ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। যার প্লট নম্বর ৮৬, রোড-১০৩ ও সেক্টর-৭। সাঈদী প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ২য় কিস্তির টাকা জমা দেননি। এ অনিয়মে তার প্লট বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয় চলতি বছরের ১০ মে রাতে। আর একই ধরনের অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত সাঈদী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.