রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়েছে, শনিবার গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে একে তার জবাব দিয়েছেন। তিনি এটাও বলেছেন, অপ্রচারের কারণে ভারতের এক্সিম ব্যাংক যদি ঋণ না জোগায় তাহলে নিজেদের অর্থেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে, যেমনটি হচ্ছে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের এই সক্ষমতা অর্জনকে এখন বিশ্ববাসী প্রশংসা করছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে এবং গত সাড়ে সাত বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বিপুলভাবে বৃদ্ধির পেছনে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ-আগ্রহ সবার জানা। প্রশ্ন উঠেছে, উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা কি সুন্দরবনের মতো জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করব? রয়েল বেঙ্গল টাইগার কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে? খুলনা-বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে বারবার যে সুন্দরবন রক্ষা করছে_ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে তা কি কেবল ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে? কেউ কেউ এটাও বলছেন, প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে ভারতের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এবং এ থেকে তারাই বেশি লাভবান হবে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, কয়লাভিত্তিক এ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, তখনও বিরোধিতা হয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় সেটাই ছিল সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এখন আমাদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত বিশ্বের সারিতে স্থান করে নেওয়া। সঙ্গত কারণেই বাড়ছে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানির চাহিদা। এ অবস্থায় বৃহৎ ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে স্থাপনের বিকল্প নেই। তবে এটাও ঠিক যে, সব পক্ষ তার সব মতের সঙ্গে একমত হবেন না। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ যেমন থাকবে, তেমনি এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে নানা মতও ব্যক্ত হবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল_ সব ধরনের দেশেই এমনটি ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রে যাবতীয় উৎকণ্ঠা-শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব প্রধানত বর্তায় সরকারের ওপর। প্রধানমন্ত্রী সে চেষ্টা করেছেন। এ ইস্যুতে কয়েক মাস ধরেই যেহেতু আলোচনা চলছে, তাই কেউ কেউ মনে করছেন সরকারের দিক থেকে আরও আগেই সবকিছু খোলাসা করা যেত। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও প্রকল্পের বিরোধিতা থেমে যাবে, সেটা ভাবার কারণ নেই। কেউ কেউ ন্যায্য প্রসঙ্গও উত্থাপন করবেন। আমরা মনে করি, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট থাকলে তা বিবেচনায় নিতে সরকারের দ্বিধা থাকা উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনাও হতে পারে। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখা চাই যে, কেবল বিরোধিতার নামে বিরোধিতা কাঙ্ক্ষিত নয়। পরিবেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক চাহিদা-বাস্তবতাও বিবেচনার বাইরে রাখলে চলবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.