তাহিরপুর উপজেলায় সংরক্ষণের অভাবে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কয়েক বছর আগেও উপজেলার সীমান্তবর্তী ও আশপাশের বনাঞ্চলে নানা প্রজাতির প্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। সীমান্তবর্তী বারেকটিলা, টেকেরঘাট, বাগলি, টাঙ্গুয়া হাওরের আশপাশের বনাঞ্চলে ছিল বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। এসব অরণ্যে ঘুরে বেড়াতো মেছোবাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। টাঙ্গুয়া ও বারেক টিলায় দিনদুপুরে দেখা যেত লজ্জাবতী বানর, চশমা পরা হনুমান, ও ধনেশ পাখি। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ আশপাশের বনাঞ্চলে দেখা যেত কাঠবিড়ালি, চিল, শকুন, হাতি, ভাল্লুক। নদী, হাওর ও বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিলবিল করতো। সুরমা, যাদুকাটা নদীতে অবাধে খেলা করতো ডলফিন।
কিন্তু এক শ্রেণির বন্যপ্রাণী শিকারির কারণে সেই জীববৈচিত্র্য আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গত সোমবার দিনদুপুরে মেঘালয় পাহাড় থেকে একটি হরিণ লোকালয়ে আসলে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী লালঘাট গ্রামের কিছু শিকারি হরিণটি ধরে জবাই করে। এরপর টাঙ্গুয় হাওরের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন দাস জবাইকৃত হরিণটি উদ্ধার করে। বন বিভাগের তৎপরতা না থাকায় এই রকম ঘটনা সীমান্ত এলাকায় প্রায় সময়েই ঘটে থাকে। যার কারণে যেগুলো এখনও টিকে আছে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর সিলেট বিভাগ ছিল বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১৩ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এর মধ্যে ১০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২ প্রজাতির পাখি ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে ১ শিঙ্গা গরু, জাভা গরু, ২ শিঙ্গা গরু, বুনো মহিষ, বারো শিঙ্গা হরিণ, নাত্রিনি হরিণ, নেকড়ে, গোলাপি মাথা হাঁস, মিঠা পানির কুমির, মার্বেল বিড়াল, সোনালি বিড়াল, বড় মদনটাক, রাজ শকুন, ময়ূর, বেঙ্গল ক্লোরিকান। সূত্রে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৪২ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মূল কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পাহাড় নিধন। গাছপালা কেটে ফেলায় পাখির খাবারের জায়গা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি কীটনাশক প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন গাছের পোকামাকড় খেয়ে মারা যাচ্ছে পাখি। এর প্রভাবে ব্যাঙের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। শিকারের জন্য বকও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। বন উজাড় করার ফলে তাহিরপুরে বাঘের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান বলেন, এই উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এক সময়ে যে রকম বনাঞ্চল ছিল, হাওর ছিল, বন্য পশু পাখি ছিল, মৎস্য ছিল, এখন আর আগের মতো নেই। শুধুমাত্র পরিকল্পনার অভাবে এসবকে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে বিপন্ন হচ্ছে তাহিরপুরের জীববৈচিত্র্য।
টাঙ্গুয়ার হাওর নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের এক্সকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন দাস বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, সীমান্ত অঞ্চলে বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে প্রশাসনিকভাবে জোড়ালো উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।