আশির দশকে বাংলাদেশ ‘এক্সপোর্ট লেড গ্রোথ’ নীতি গ্রহণ করে এবং সন্দেহ নেই যে তা সুফল দিয়েছে। এর ফলে রফতানি আয় বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে লাখ লাখ কর্মসংস্থান। এখন যে ৪০ লাখের বেশি নারীকে আমরা তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত দেখি, তা এই নীতিরই ফল। গত এক যুগে রফতানি আয় বৃদ্ধির চিত্র থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে_ ২০০৪-০৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ আয় ৩৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রফতানি বাণিজ্য প্রসারের সঙ্গে যুক্তদের নীতিগত ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানে সরকার বরাবরই আগ্রহী এবং আমরা তা সমর্থন করি। রফতানি বাড়ানোর এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে। আগামী ২৫ বছরে উন্নত বিশ্বের সারিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হলে এ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে। ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে ৫ হাজার কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এরই অংশ। তবে এক্সপোর্ট লেড গ্রোথের ধারায় এখন দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে_ সীমিত পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বাজার বহুমুখী করা। গত রোববার ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ পণ্য রফতানি আয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ দুটি বিষয়কে আমাদের রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, অধিক মূল্য সংযোজিত হয় এমন পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশজ কাঁচামালভিত্তিক পণ্যের উৎপাদন বাড়াতেও মনোযোগী হতে হবে। আমরা জানি, কেবল পোশাক ও সংশ্লিষ্ট বস্ত্র খাত থেকেই আসে রফতানি আয়ের প্রায় ৮৮ শতাংশ। আর রফতানি আয়ের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ। এ দুটি লক্ষ্য অর্জন যে সহজ নয় সেটা সরকার, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর জানা আছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা যেমন এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হবেন, তেমনি চাই সমন্বিত পদক্ষেপ। বিশ্ববাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার কথাও মনে রাখা চাই। আমরা যে বাজারে যেতে চাইব, প্রতিযোগীদের টার্গেটেও সেটা থাকা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় বাজার সম্প্রসারণ করতে হলে পণ্যের গুণমান যেমন ক্রমে বাড়িয়ে যেতে হবে, তেমনি দামও রাখতে হবে প্রতিযোগিতামূলক। উন্নত বিশ্ব থেকে শুল্ক ছাড়সহ বাণিজ্য সুবিধা আদায়েও চাই কূটনৈতিক উদ্যোগ। তবে গত তিন দশকে রফতানি খাত যেভাবে প্রসারিত হয়েছে তাতে নতুন লক্ষ্য অর্জনে আমরা ব্যর্থ হবো না, এটাই ভরসার কথা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.