সুইফট ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলোকেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে ব্যাংকের অবকাঠামো ও যুক্তিসংগত নিরাপত্তার দিকে। তৃতীয় পক্ষের পণ্য ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে ব্যাংকগুলোকেই। সন্তুষ্ট থাকতে হবে নিরাপত্তার মান নিয়েও। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো সুইফটের প্রধান নির্বাহী গডফ্রিড লাইব্র্যান্ডের এক চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে। সুইফট ব্যবহারকারী বিশ্বের অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুইফটের কোনো সেবা ও সংযোগ নিয়ে সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতেও বলা হয়েছে। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় সুইফটের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর এ উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রাহক নিরাপত্তা কর্মসূচি (সিএসপি) চালু করেছে অর্থ স্থানান্তরে নেটওয়ার্ক প্রদানকারী সংস্থা সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন)। এ কর্মসূচির অধীনে একটি কাস্টমার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স টিম তৈরি করা হয়েছে। এ টিমকে সহায়তা করছে বিশ্বখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান বে সিস্টেম ও ফক্স আইটি। চিঠির ভাষ্যমতে, সুইফট গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ থেকে ব্যবস্থাপনা সবার কাছেই নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। সুইফট গ্রাহকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও তদারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। সিএসপির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাহকদের সহায়তা করা, এর ফলাফল ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটা সফল হতে পারে গ্রাহক ও সুইফটের যৌথ প্রচেষ্টাতেই। সুইফট ব্যবহারকারী বাংলাদেশের দুটি শীর্ষ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের সব ব্যাংক সুইফটের সেবা নেয়। তবে কোনো সমস্যা হলে তাদের আর তখন পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে সুইফটের কোনো কর্মকর্তা নেই। ভারত থেকে আসতে হয় তাঁদের। সব সময় আসতেও চান না। তবে এখন নতুন করে সিএসপি চালু করায় সমস্যা কিছুটা মিটবে। সুইফটের চিঠিতে নিরাপত্তা বাড়ানো বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি চালু করা সিএসপির মাধ্যমে গ্রাহকদের সহায়তা করতে চাই। এ কর্মসূচির দৃশ্যমান ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এখানে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেসব প্রতিষ্ঠান বাহ্যিক ও পরিবেশগত যৌক্তিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। সিএসপির অধীনে কাস্টমার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স টিম তৈরি করা হয়েছে। এ টিমকে সহায়তা করছে বিশ্বখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান বে সিস্টেম ও ফক্স আইটি। এ টিম গ্রাহকদের নিরাপত্তা তদন্ত করবে ও গ্রাহকদের নিজস্ব তদন্তেও সহায়তা করবে।’ চিঠিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ-সংক্রান্ত তৈরি অ্যালায়েন্স এক্সেস সফটওয়্যার ইনস্টল করার নির্দেশনা রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৬ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সুইফটের বার্ষিক সম্মেলন সিবোস-২০১৬-তে সুইফটের নিরাপত্তা ও পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ আসবে। চিঠিতে বিভিন্ন সদস্য ব্যাংকের অর্থ চুরি (হ্যাকিং) হওয়ার নতুন তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হ্যাকাররা জুন থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ চুরির চেষ্টা করে আসছে। এতে সফল হয়েছে কয়েকটি প্রচেষ্টা। অর্থাৎ কিছু ব্যাংকের অর্থ চুরি হয়েছে। সুইফট বলছে, এখনো সাইবার নিরাপত্তায় ঝুঁকি রয়েছে। হ্যাকাররা খুবই সুচতুর ও সূক্ষ্ম কায়দায় অর্থ চুরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চিঠির বিষয়ে বক্তব্য জানতে সুইফটের প্রধান কার্যালয়ে মেইল করা হলেও তার জবাব পাওয়া যায়নি। সুইফট মেম্বার অ্যান্ড ইউজার গ্রুপ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এ এম এম ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ সতর্কতামূলক চিঠি পেয়েছি। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.