চন্দনপুরার গুলজার বেগম উচ্চ বিদ্যালয়। এর পূর্ব দিকে গেছে আন্দরকিল্লা-বহদ্দারহাট সড়ক। এ সড়কের পূর্ব দিকে আছে দেড়শ’ বছরের পুরনো এক পুকুর। দশ কাঠার এ পুকুর ভরাট করে চলছে নির্মাণকাজ। অথচ পুরনো এ পুকুর ভরাট না করতে নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতেরও। পরিবেশ অধিদপ্তর, উচ্চ আদালত কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে রাতারাতি পুকুর ভরাট করে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। রহস্যজনক কারণে নীরব সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষও।
চট্টগ্রামে শতবর্ষী পুকুর ভরাট না করতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ১৮ এপ্রিল রিট আদেশ দিয়েছেন। এলাকাবাসীর পক্ষে মো. নাসির উদ্দিন ৪ এপ্রিল এ রিট দায়ের করেন। এ রিট আমলে নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কৃষ্ণা দেবনাথের একটি বেঞ্চ ১৮ এপ্রিল এ বিষয়ে রায় দেন। রায়ের অনুলিপির পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি মীমাংসা করার জন্য বলা হয়েছে। গত ৯ মে ১৪ দিন পার হলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। খোঁজ নিয়ে জানা
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিসি রোড সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাসান বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণের পর পর আমরাই আবার পুকুরের আগের অবস্থান ফিরিয়ে আনব। এ বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চলছে।’ তবে দ্বিমত পোষণ করে মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জনস্বার্থে আমি পুকুর ভরাট বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করে কোনো সাড়া না পাওয়ায় উচ্চ আদালতের দারস্থ হই। হাইকোর্ট এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সিডিএ। রিট আদেশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।’
জানা গেছে, মসজিদের ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকলেও পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই। তাছাড়া মসজিদ ভবন নির্মাণের অনুমতিতে সিডিএ উল্লেখ করেছে, ‘প্রস্তাবিত সাইটের পূর্ব দিকে একটি পুকুর বিদ্যমান রহিয়াছে। ওই পুকুরের অংশ বাদ দিয়া মসজিদ নির্মাণ করিতে হইবে এবং বিদ্যমান পুকুরের আকৃতির কোনো পরিবর্তন করা যাইবে না।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুর ভরাট করে নির্মাণকাজ করার চিন্তাভাবনা শুরু করে। সেই থেকে নানাভাবে পুকুরটি ভরাট করতে চেষ্টা চালায় মসজিদ পরিচালনা কমিটি। পুকুর ভরাট করে সেখানে মার্কেট করার উদ্যোগও নেওয়া হয় তখন। এলাকাবাসীর বিরোধিতায় সে উদ্যোগ থেকে ফিরে আসে মোতওয়ালি্ল কমিটি। ফিরে এলেও হাল ছাড়েননি তারা। দুই বছর আগে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ চন্দনপুরা পূর্ব গলি সড়কের উন্নয়নকাজ করে সিডিএ। সড়কের প্রস্থ বাড়ানোর লক্ষ্যে সিডিএ পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে পুকুরের পাশের ১০ ফুট জায়গা ভরাট করে। এ সুযোগে মসজিদ কমিটি পুকুরটি পুরোপুরি ভরাট করে ওই স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার জন্য আবার কার্যক্রম শুরু করে।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী জাহিদ আবছার চৌধুরী বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে এ পুকুর ভরাট করে মার্কেট এবং মসজিদ নির্মাণের পাঁয়তারা করে আসছিল। সিডিএ রাস্তা সম্প্রসারণের নামে পুকুরের একাংশ ভরাট শুরু করলে কাজটি করতে প্রভাবশালী মহলের সুবিধা হয়। পরে সিডিএর দেওয়া নকশা এবং অনুমোদনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুরটি ভরাট করে এখন মসজিদের নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে তারা। আন্দরকিল্লা থেকে চকবাজার পর্যন্ত এটিই একমাত্র পুকুর। আশপাশ এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর জন্য এতদিন এ পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করত।’
মসজিদের মোতওয়ালি্ল শাহনেওয়াজ বলেন, ‘সিডিএ মসজিদের দুই পাশে রাস্তা সম্প্রসারণ করায় মসজিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আমরা পুকুর ভরাট করে মসজিদ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিই। মসজিদের পিলার উঠে গেলেই আমরা পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব। কোনো ধরনের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, শুধু মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য এ নির্মাণকাজ করা হচ্ছে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.