কাঁচপুর ব্রিজের কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রহিম স্টিল মিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কোয়ার্টস পাউডার তৈরি করা হচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত যুগান্তরের শীর্ষ খবরে এ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এতে জানা যায়, প্রাণঘাতী কোয়ার্টস পাউডার তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সোনারগাঁয়ের একটি গ্রামেরই ১২ জনসহ গত ১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর রয়েছে। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুই শতাধিক শ্রমিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়ার্টস ডাস্ট দেহে প্রবেশ করলে ফুসফুসে রক্ত জমে যায়, ডার্মাটাইটিজ ও আর্থ্রাইটিজ হয়। এই পাউডার ফুসফুসের ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে। মূলত কোয়ার্টস পাউডার হল সিলিকন ডাইঅক্সাইড বা সিলিকা, যা একটি রাসায়নিক যৌগ। এর সামান্য পরিমাণ কণাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সংস্থা অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ওএসএইচএ) নির্মাণ শ্রমিকদের দ্বারা সিলিকা ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, আমাদের দেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ রহিম স্টিল মিলে কোয়ার্টস পাউডার তৈরির ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে? বস্তুত এ ব্যাপারে তাদের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। জানা যায়, সরকারের সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে সেখানে ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে এই পাউডার।
একসময় কোয়ার্টস পাউডার আনা হতো ভারত থেকে। সেদেশের সরকার এর উৎপাদন বন্ধ করে দিলে রহিম স্টিল মিল কর্তৃপক্ষ দেশেই এটি উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে শুরু হয় উৎপাদন। মিলের কেরোসিন শাখায় তৈরি হতে থাকে কোয়ার্টস পাউডার। এ বিভাগে কাজের মজুরিও দেয়া হয় বেশি। ফলে দরিদ্র শ্রমিকরা সহজেই এ প্রলোভনে পা দিচ্ছেন। অথচ তাদের দেয়া হয় না কোনো নিয়োগপত্র বা পরিচয়পত্র, যাতে কোয়ার্টস পাউডারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কোনো শ্রমিক অসুস্থ হলে অথবা কারও মৃত্যু হলে তার দায় মিল কর্তৃপক্ষের ওপর না বর্তায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু বেআইনি নয়, অমানবিকও। সরকারকে অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতে ‘উপর’ থেকে চাপ এলে কিছুদিনের জন্য কোয়ার্টস পাউডারের উৎপাদন বন্ধ রাখা হতো। বস্তুত এটি কোনো সমাধান নয়। এর উৎপাদন স্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে এ কাজ করতে গিয়ে যেসব শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে অথবা তাদের ‘ম্যানেজ’ করে দেশের আরও কোনো কারখানায় কোয়ার্টস পাউডার বা এ ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হচ্ছে কি-না কে জানে! হওয়াটাই স্বাভাবিক। কাজেই আমরা বলব, সরকারের উদ্যোগে অনুসন্ধানী টিম গঠন করে কারখানাগুলোর কাজের পরিবেশ খতিয়ে দেখা হোক। সেখানে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করা হোক। জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করার সুযোগ নেই। যারা তা করছে, তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.