শনিবার দেশে জঙ্গি দমনে এক বড় ধরনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এদিন রাজধানীর উপকণ্ঠ গাজীপুর এবং টাঙ্গাইলে আইনশৃংখলা বাহিনীর তিনটি পৃথক অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। গাজীপুরের পাতারটেকে পরিচালিত ‘অপারেশন স্পট-৮’ অভিযানেই নিহত হয়েছে ৭ জঙ্গি, হাড়িনাল ও টাঙ্গাইলের কাগমারায় দুটি পৃথক অভিযানে মারা গেছে দু’জন করে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সূত্রমতে, নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয়ও মিলেছে। তাদের একজন নব্য জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ। জঙ্গিদের আস্তানা থেকে একে-২২ রাইফেলসহ প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ৩০ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে ।
আইনশৃংখলা বাহিনী নিহত জঙ্গিদের যে পাঁচজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে, তা সত্য হয়ে থাকলে বলতেই হবে এটা তাদের এক বড় সাফল্য। এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মতে, নিহত আকাশ গত ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে নব্য জেএমবির সদস্যদের পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছিল। এই কর্মকর্তার দাবি, শনিবারের অভিযানের পর জেএমবির শক্তির ৯০ শতাংশই ধ্বংস করা হয়েছে। অবশ্য ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেছেন, নিহতদের আঙুলের ছাপ নেয়া হয়েছে, এনআইডি সার্ভারে থাকা ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
হলি আর্টিজানের ঘটনার পর দেশব্যাপী জঙ্গি দমনে যে ব্যাপক তৎপরতা চলেছে, তাতে জঙ্গি দমনে সাফল্য এসেছে অনেকটাই। তবে দেশের এখানে-সেখানে জঙ্গি বিশেষত জেএমবির সদস্যদের তৎপরতা যে থেমে নেই, শনিবারের ঘটনা তারই প্রমাণ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে নব্য জেএমবির ৩৪ দুর্ধর্ষ সদস্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এদের সবাই নাকি আÍঘাতী ও সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এরা রাজধানীর উপকণ্ঠগুলোকেই তাদের জন্য নিরাপদ আস্তানা ভেবে সেখানেই অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের তালিকাটি যদি নির্ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকেও পাকড়াও করার জোর প্রচেষ্টা নিতে হবে বৈকি। বর্তমান সময়টিতে জঙ্গিরা ব্যাকফুটে রয়েছে বলা যায়। আইনশৃংখলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় তারা বাধ্য হয়েই ব্যাকফুটে গেছে। শিথিল তৎপরতায় তারা আবারও জেগে উঠতে পারে অনুমান করা চলে। তাই জঙ্গি দমন তৎপরতায় শৈথিল্য কাম্য নয়। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে জঙ্গি সন্দেহে নিরীহ-নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানি বা প্রাণঘাতী আক্রমণের শিকার না হয়। এ ধরনের অভিযোগ যে নেই, তা নয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর তো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের পরিচয়পত্র দেখলেই পুলিশ বলে উঠত- তোমরা তো সবাই জঙ্গি!
আমারা চাই, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ চিরতরে নির্মূল হোক। এই অপশক্তি অনেক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, দেশবাসীকে করে রেখেছে আতংকগ্রস্ত। তবে জঙ্গি দমনের তৎপরতা নিয়ে যেন অনাকাক্সিক্ষত কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.