এই পৃথিবীতে বিচিত্র সব রীতি-রেওয়াজ-উৎসব রয়েছে। এসব উৎসবগুলির বেশিরভাগই হয় বিভিন্ন আঞ্চল ভিত্তিক। তাই হয়ত এই ধরনের আচার অনুষ্ঠানের কথা অনেকেই জানেন না। আমাদের পার্শ্ববতী দেশ ভারতেও আছে এই ধরনের অনেক আচার অনুষ্ঠান। আধ্যাত্মিকতা ও অলৌকিকতা নিয়ে দেশটিতে বহুযুগ যুগ থেকে চলে আসা এমন বহু উৎসব রয়েছে যার কথা শুনলে চমকে উঠেন অনেকে। সে দেশের ৫টি বিচিত্র উৎসব সম্পর্কে জানুন কিছু তথ্য।
১) অগ্নিখেলি: এক বিশাল মাঠে জড়ো হন খেলোয়াড়রা। সকলের পরনে থাকে ল্যাঙট জাতীয় কিছু। খেলোয়াড়েরা এরপর তৈরি করে নেন আগুনের গোলা। দু’টি দলে ভাগ হয়ে যান তাঁরা আর তারপর শুরু হয় আগুন নিয়ে খেলা একে অপরের দিকে আগুনের গোলা ছুড়ে মারাই হল অগ্নিখেলি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা। খেলতে খেলতে কারও গায়ে আগুন লেগে গেলে তার গায়ে ছেটানো হয় পবিত্র জল, ‘কুমকুমার্চনে’।
২) কার্নিমাতা উৎসব: ভারতের রাজস্থানের কার্নিমাতা হলেন মা দুর্গার একটি রূপ। রাজস্থানের কার্নিমাতা মন্দিরে রয়েছে শত শত ইঁদুর। ওই ইঁদুরের দ্বারা নোংরা করা প্রসাদ খাওয়া নাকি অতি পুণ্যের কাজ। প্রতি বছর কার্নিমাতা উৎসবের সময়ে যাঁরা সেখানে পুজ দিতে চান, তাঁরা এই পুণ্যটি করে থাকেন। যদিও বলা হয় যে যিনি খুবই ভাগ্যবান একমাত্র তিনিই ওই ছাইরঙা ইঁদুরের ভিড়ে একটি সাদা ইঁদুরকে দেখতে পান।
৩) থাইপুসম: দক্ষিণ ভারতের এই উৎসবের কথা জানলে শিউরে উঠতে হয়। দেবসেনাপতি মুরুগান অথবা কার্তিকের এই উৎসবের মূল বিষয়টি হল শরীরকে কষ্ট দিয়ে ঈশ্বরের পুজা করা। শরীরে যতবার এবং যতরকম ভাবে সম্ভব ধারালো পিয়ার্সিং দিয়ে ফুঁড়ে দেওয়াই হল এই উৎসবের রীতি।
৪) মাদেস্নান: জাতপাত নিয়ে ভারতে যে কত রকমের কুসংস্কার রয়েছে তার অন্যতম প্রমাণ এই উৎসব। কর্ণাটকের সুব্রমনিয়া মন্দিরের এই প্রথা কয়েকশো বছরের। ব্রাহ্মণেরা খেয়ে উঠে যাওয়ার পরে সেই নোংরা পাতের উপর গড়াগড়ি দেন নীচু জাতের মানুষ। তাদের ধারণা, এটি করলে নাকি তাদের শরীরের নানা রোগব্যাধি সেরে যাবে। ২০১০ সালে কর্ণাটক সরকার এই উৎসবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও ২০১১ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হয় স্থানীয় মানুষদের বিরোধিতায়।
৫) আদি উৎসব: তামিল আদি মাসের ১৮ তারিখে তামিলনাড়ুর কারুর জেলার মহালক্ষ্ণী মন্দিরে শত শত মানুষ জড়ো হন। সারিবদ্ধ হয়ে বসে পড়েন মন্দির প্রাঙ্গণে আর মন্দিরের পুরোহিতেরা একে একে তাদের মাথায় নারকোল ফাটান। প্রচলিত ধারণা, এই নারকোল ফাটানোই তাঁদের জীবনে সৌভাগ্য এনে দেবে। কিন্তু এর পিছনের গল্পটি অন্য। ব্রিটিশ ভারতে একবার ওই মন্দিরটি ভেঙে রেললাইন তৈরীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আপত্তি জানান স্থানীয় মানুষ। এরপর ব্রিটিশ শাসকেরা তাদের ভক্তি পরীক্ষা করতে গিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ করে বসেন। যদি ভক্তরা তাদের মাথা দিয়ে পাথর ভাঙতে পারেন তবে মন্দিরটি ভাঙা হবে না। শেষ পর্যন্ত মন্দিরটি ভাঙাতো হয়নিই, বরং সেই পাথর ভাঙা এখন নারকেল ফাটানোয় পরিণত হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.