দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে যখন কমিশনে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, তখন উদ্দেশ্যটা ছিল কমিশনটি যেন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও একটি সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা বড় ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে সংস্থাটির সদস্যরা ব্যুরোর আমলের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করছেন অবশ্যই, কিন্তু সেই ক্ষমতা কি যথাযথভাবে প্রয়োগ করছেন তারা? প্রথম যে কথা, দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সংস্থাটি থেকে কী এমন আশা করা যেতে পারে! খবর বেরিয়েছে, দুদকের কারজাসিতে ৯৩ জন প্রভাবশালী আসামিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তা করা হয়েছে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এদের বড় বড় দুর্নীতি শনাক্ত হওয়ার পর এমনভাবে মামলা করা হয়েছে, যাতে তাদের কঠোর শাস্তি হতে না পারে। অর্থাৎ অপরাধ গুরুতর; কিন্তু মামলা হয়েছে লঘুদণ্ডের ধারায়। দুদক কর্তৃপক্ষের হাতে সম্প্রতি এমন কিছু প্রমাণ এসেছে, যাতে দেখা যায় বিশাল অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কৌশলে লঘুদণ্ডের ধারা (২৬-এর ২) প্রয়োগ করে এদের বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। অবৈধ সম্পদ থাকার ক্ষেত্রে যেখানে ২৭(১) ধারায় মামলা হওয়ার কথা, যে ধারায় অপরাধীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ তার কারাদণ্ড হতে পারে, সেখানে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে ২৬(২) ধারায় মামলা দায়ের করে অপরাধ লঘু দেখিয়ে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। এবং তা এত কৌশলে করা হচ্ছে, দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্দাজও করতে পারছে না।মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অনিয়ম রোধে এখন থেকে একই আইনের একাধিক ধারায় মামলা দায়েরের সুপারিশের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে দুদক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন আইন করলেই অথবা বাধ্যবাধকতার নির্দেশনা জারি করলেই যে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি থেকে নিবৃত্ত থাকবেন, তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? সে ক্ষেত্রে তারা হয়তো নতুন কৌশলে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। কথায় বলে, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন দুদকেই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা। দুদক এমন এক প্রতিষ্ঠান, যার সুষ্ঠু কার্যকারিতার ওপর দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়টি বহুলাংশে নির্ভর করে। তাই এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা ও চারিত্রিক সংহতি হতে হবে প্রশ্নাতীত। দুর্নীতিবাজরা যদি তাদের দুর্নীতিলব্ধ অর্থের একটা অংশ দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে সাফ-সুতোর থাকতে পারে, তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হবে কীভাবে? আমরা চাইব, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সময় অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করেই তা করা হবে। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে কারসাজির মামলায় আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা। আমরা দুদককে দেখতে চাই একটি অর্থবহ কমিশন হিসেবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.