বিগত তিন বছর ধরে অ্যাডিলেড ভিত্তিক বাংলাদেশি সংগঠন Adelaide Bangladeshi Cultural Club (ABACC) আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশের বিশেষ খাবার, পোশাক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে উৎসব।বিগত বছরের মত এবারও কিছুদিন আগে পালন করা হয় এই দিনটি ।
যা সাউথ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের জন্যে পুরো একটা দিন বাংলাদেশকে নিয়ে মেতে উঠার এক অপূর্ব আয়োজন। বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের এ বছরের শ্লোগান ছিলো “Taste the flavour of Bangladesh”।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা এবং অ্যাডিলেডবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে এই প্রবাসে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করার মহতী ইচ্ছে নিয়েই স্থানীয় একটি স্কুল প্রাঙ্গণে দুপুর থেকে শুরু হয়ে এই মেলা চলে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত।
বরাবরের মত এবারও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এবার যোগ দিয়েছেন এমপি স্টিভ জিওর্গানাস, ফেডারেল মেম্বার অফ হিন্দমার্স, জন গার্ডনার এমপি শ্যাডো মিনিস্টার ফর মাল্টিকালচারাল আফেয়ার্সসহ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা।
মূলত মেলাপ্রাঙ্গণে নানান স্বাদের, নানান ধারার ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার স্টলের পাশাপাশি ছিলো শাড়ি ও গহনার স্টল, ছিলো অ্যাডিলেডের একমাত্র বাংলা পাঠাগার ‘পিদিমের’ বাংলা বইয়ের দোকান। আয়োজকরা চেষ্টা করছেন প্রতিবছর কিছু না কিছু নতুন যোগ করতে। এবছর নতুন যোগ করেছেন শিশুদের জন্য দুটি আকর্ষণীয় রাইড।
মেলাপ্রাঙ্গণ প্রায় সারাদিন মুখর ছিলো বাংলাদেশিসহ অন্যান্য মাল্টিকালচারাল মানুষের পদচারনায়। বিভিন্ন স্টল ভিজিটের পাশাপাশি আগত লোকজন উপভোগ করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অবাক সংগঠনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী চলতে থাকে একের পর এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছিলো বিভিন্ন বয়েসী শিশু কিশোরের অংশগ্রহণে নাচ, গান ও আবৃত্তি এবং বিশেষ আকর্ষণ ছিলো তাদের পরিবেশিত নাটক ‘পান্তাবুড়ি’’ যা আগত দর্শক শ্রোতাদের অন্যরকম আনন্দ দেয়।
দেশের গানের সাথে বাচ্চাদের যেকোন পরিবেশনা নির্মল আনন্দ দেয়, তাদের নাচ স্বাভাবিক ভাবেই থাকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বাচ্চাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বড়দের আয়োজনও ছিলো উপভোগ্য, ফ্যাশন শো এবং একক গানের পাশাপাশি, জনপ্রিয় সব নতুন-পুরাতন ব্যান্ড গানের পরিবেশনা ছিলো মনকাড়া।
প্রথমবারের মতন এসেছেন এমন অনেককেই যখন জিজ্ঞেস করা হয়, কি সবচেয়ে ভালো লাগলো? তাদের ‘দারুণ, অনেক কিছুই, এই যেমন ফুচকা খেলাম, পিঠা, পান, বই কিনেছি’ -এমন এলোমেলো উত্তরেই বোঝা যায়, গোটা সময়টাই ছিলো কোন না কোন ভাবে উপভোগ্য। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মন ও মনন জুড়ে যে স্বদেশ থাকে সবসময়, তার অল্প কিছু ছোঁয়াই যে তাঁরা মনপ্রাণ ভরে উপভোগ করবেন এটাই স্বাভাবিক।
মূল অনুষ্ঠানের ঠিক আগের বুধবারেই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র বাংলাদেশি কমিউনিটি রেডিও ‘রেডিও বাংলা অ্যাডিলেড’’ এর সাথে এক ঘণ্টার এক লাইভ অনুষ্ঠানে অবাক টিম তুলে ধরার প্রয়াস পান গোটা অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি এবং মূল অনুষ্ঠানে পরিবেশিত গানের বেশ কিছু গাওয়ার সুযোগ।
২৭ শে নভেম্বরের (রোববার) এই মূল আয়োজনটি শেষ করেন সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউল আহমেদ খান এবং সাধারণ সম্পাদক অরূপ মিত্রের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে।
প্রবাসী যারা তাদের প্রত্যেকেরই দেশ ছাড়ার পেছনে থাকে কোন না কোন গল্প। তা হতে পারে আনন্দের বা বেদনার কাব্য। প্রবাস জীবনে একবার পাড়ি জমালে বেশিরভাগ মানুষেরই আর দেশে ওভাবে ফেরা হয় না। তাই প্রবাসে থেকেও দেশের অনেক কিছু মিস করেন অনেকেই খুব বেশি। আর এই রকম আয়োজনগুলো তাই সবাই আগ্রহ এবং ভালোবাসা নিয়ে উপভোগ করেন।
আয়োজকদের কাছেও প্রত্যাশাটা তাই সময়ের সাথে সাথে বেড়ে যায়, কথা হচ্ছিলো সংগঠনটির নেপথ্যে থেকে চালাচ্ছেন এমন বেশ ক’জনের সাথে, তাদের কণ্ঠেও ফুটে উঠে সেই প্রত্যয়ই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.