অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সর্বশেষ সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিল্পকারখানায় দ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে। অর্থমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে দেশের সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে অর্থমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তের কারণে সে স্থবিরতা কেটে যাবে এটাই আশা করা যায়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে গত কয়েক বছরে উদ্যোক্তারা কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা বহুল আলোচিত। বিশেষ করে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদন যেভাবে ব্যাহত হচ্ছে তাতে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে বিনিয়োগকারীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই অর্থমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বলেছেন, আগামী দু’বছরের মধ্যে শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তার এ বক্তব্যে শিল্প উদ্যোক্তাদের হতাশা বাড়বে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর ভুক্তভোগী মহলসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে মঙ্গলবারের যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেরি না করে এখনই গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে। বর্তমানে দুই হাজারের বেশি শিল্পকারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন দীর্ঘদিন ধরে তিতাস, বাখরাবাদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ে আছে। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। কাক্সিক্ষত মাত্রায় কর্মসংস্থান না হলে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। কাজেই দেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যেহেতু গ্যাসের মতো মূল্যবান সম্পদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, তাই এর ব্যবহারে সতর্ক হওয়া দরকার। বিশেষ করে অনুৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে শিল্পকারখানায় এর ব্যবহার বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। গাজীপুরসহ সারা দেশের শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকটের বিষয়টি বহুল আলোচিত। সংযোগের অভাবে যেসব কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না, সেসব কারখানায় জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগের পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাসের চাপ না থাকায় সারা দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধানে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামীতে এ সংকট যে আরও তীব্র আকার ধারণ করবে, তা বলাই বাহুল্য। বাপেক্সকে শক্তিশালী করা না হলে গ্যাস খাতে আগামীতে ঝুঁকি বাড়বে, যা বহুদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। কাজেই বাপেক্সকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান না হলে দেশী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তারাও হতাশ হবেন। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা না হলে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনিশ্চয়তা বাড়বে। এসব দিক বিবেচনায় গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব ধরনের সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপই কাম্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.