পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের দাম আবারও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। বর্তমানে এক এমবিপিএস (মেগা বিট প্রতি সেকেন্ড) ব্যান্ডউইটথ বিএসসিসিএল বিক্রি করছে ৬২৫ টাকায়। নতুন দাম কার্যকর হলে সেটি কমে ৫৬৩ টাকায় নেমে আসবে। জানতে চাইলে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যান্ডউইটথের দাম ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দাম কমানোর প্রস্তাব শিগগিরই অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, দেশের মানুষ যাতে কম দামে ইন্টারনেট পায় সে জন্য সরকার সব সময় সচেষ্ট। বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইটথের দাম কমানোর প্রস্তাবে তাই অবশ্যই অনুমোদন দেওয়া হবে। বিএসসিসিএল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম সাবমেরিন কেবলের (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪) মাধ্যমে পাওয়া ২০০ জিবিপিএসের ব্যান্ডউইটথের ব্যবহার আরও বাড়াতে দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিএসসিসিএল এখন ১৭৬ জিবিপিএস (গিগা বিট প্রতি সেকেন্ড) ব্যান্ডউইটথ বিক্রি করছে। এর মধ্যে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১০ জিবিপিএস। এ ছাড়া দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও ১ হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইটথ এ বছর পেতে যাচ্ছে।
বিএসসিসিএল সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের দাম কমিয়েছিল। তখন প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইটথের দাম ১ হাজার ৬৮ থেকে কমিয়ে ৬২৫ টাকা করা হয়। দাম কমানোর পরে গত দুই বছরে বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইটথের বিক্রি ৪০ জিবিপিএস থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৬ জিবিপিএস হয়েছে। অর্থাৎ দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যান্ডউইটথ ব্যবহার বেড়েছে চার গুণের বেশি।
বাংলাদেশে বর্তমানে দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের চাহিদা রয়েছে। বিএসসিসিএলের বাইরে বাকি ২০০ থেকে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইটথের জোগান আসে ইন্টারনেট ট্রান্সমিশন কোম্পানির (আইটিসি) মাধ্যমে। আইটিসি প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকে ব্যান্ডউইটথ আমদানি করে।
মুঠোফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) বলছে, তারা বিএসসিসিএল বা আইটিসির কাছে সরাসরি ব্যান্ডউইটথ কিনতে পারে না। তাদের ব্যান্ডউইটথ কিনতে হয় আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অপারেটর (আইআইজি) থেকে। আইআইজির কাছ থেকে কেনা ব্যান্ডউইটথের সঙ্গে যোগ হয় এনটিটিএন অপারেটরের অবকাঠামো ভাড়া, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), পরিচালন ব্যয় ও সরকারের সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির খরচ। সব খরচ যোগ করে কয়েক হাত ঘুরে বর্তমান দামের চেয়ে কম দামে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
বর্তমানে ন্যূনতম ১০ জিবিপিএস কিনলে সর্বনিম্ন দামে অর্থাৎ ৬২৫ টাকায় বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইটথ কেনা যায়। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৯৯৯ এমবিপিএস ব্যান্ডউইটথ ৯০০ টাকা, ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৪৯৯ এমবিপিএস ৮২৫ টাকা, ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৯৯৯ এমবিপিএস ৭৫৫ টাকা, ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার ৯৯৯ এমবিপিএস ব্যান্ডউইটথ ৬৮০ টাকায় বিক্রি করে বিএসসিসিএল। অর্থাৎ ব্যান্ডউইটথ বেশি কিনলে দাম আনুপাতিকভাবে কমে।
আইআইজি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান কৌশল কর্মকর্তা (সিএসও) সুমন আহমেদ বলেন, বেশির ভাগ আইআইজি বিএসসিসিএলের সর্বনিম্ন দরের ব্যান্ডউইটথ কিনতে পারে না। আবার আইটিসি, আইআইজি, আইএসপি প্রতিটি স্তরে সরকারের সঙ্গে ১০ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হয়। এরপর মূসক ও নিজেদের লাভের হিসাব রয়েছে। তাই বিএসসিসিএলের দামের চেয়ে বেশি মূল্যে আইএসপির কাছে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে আইআইজিগুলো। ব্যান্ডউইটথের এ দাম কমানোর ফলে গ্রাহক খুব একটা লাভবান হবেন না।
ইন্টারনেট সংযোগদাতাদের সংগঠন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএসপিগুলোর যে খরচ হয়, তার একটা ক্ষুদ্র অংশ ব্যান্ডউইটথ কেনা। আইএসপির মোট খরচের সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ ব্যয় হয় ব্যান্ডউইটথের জন্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.