৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে সারা দেশে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ শুধু বাধাই দেয়নি, হামলা করে প্রায় সব ক্ষেত্রে সেগুলো পণ্ড করে দিয়েছে। অথচ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মিছিল-সমাবেশ ও যে কোনো ধরনের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অনুষ্ঠান করা নাগরিকের স্বীকৃত অধিকার। আমাদের সংবিধানও শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতসহ যে কোনো ধরনের অহিংস প্রতিবাদকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে মিছিল-সমাবেশে বাধা ও হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পাশাপাশি সাংবিধানিক অধিকারও ক্ষুণœ হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর থেকে দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ একে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে। প্রশ্ন হচ্ছে, দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশের ঘোষণা দিলে না হয় জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারে, বাধা দিতে পারে। অথচ বিএনপি আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ পণ্ড করে দেয়া হয়েছে। যেমন বরিশালে পুলিশের বাধা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় বিএনপির মিছিল-সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পাশাপাশি একজন নারী নেত্রীসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মিছিল সমাবেশকারীদের যখন মারধর করছে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, তখন পুলিশ আক্রান্তদের উদ্ধারে এগিয়ে তো আসেইনি, উল্টো দায়িত্ব পালনরত একজন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে। তাকে নিজ দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছে। বর্তমান যুগে পুলিশ ও সরকারি দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরিশাল ছাড়াও দেশের অনেক জেলায় একইভাবে মিছিল সমাবেশকারী বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমন ন্যক্কারজনক আচরণ করেছে পুলিশ। ফলে পুলিশের কাজ সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা, নাকি ক্ষমতাসীনদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন- এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিএনপি নির্বাচনে আসেনি সেটা তাদের বিষয়; কিন্তু ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি আদালত কর্তৃক বৈধ বলা হলেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটাকে তো স্বাভাবিক বলার উপায় নেই। তারপরও সরকার টিকে গেছে এবং দেশে মোটামুটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। ক্ষমতাসীন দলও ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এখন প্রশ্ন হল, গণতন্ত্রের ‘বিজয় দিবসে’ অন্যের মিছিল-সমাবেশ পণ্ড করা তথা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ তো গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না। প্রতিপক্ষকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার নির্বিঘেœ ভোগ করতে দেয়াই হবে গণতন্ত্রের বিজয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের নীতিগত কোনো ইস্যু নয়। অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য ও উচ্ছৃংখল ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের হীন মানসিকতার কাজ এটি। এতে সংঘাতের উসকানি আছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তার অভিযোগটি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে হামলাকারী পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াই হবে গণতান্ত্রিক মানসিকতা।
২০১৬ সাল রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। ২০১৭ সালও রাজনৈতিক স্থিতিশীল একটি বছর হবে- এটাই কাম্য। ক্ষমতাসীন দল ও সরকার নিজেদের পাশাপাশি অন্য সব দলের ও মতের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ না করে তা ভোগ করার সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করে দেবে- সাধারণ মানুষ এমনটিই প্রত্যাশা করে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.