লেখাপড়াই ছাত্রদের মূল কাজ। সবার ওপরে জ্ঞানার্জন ও লেখাপড়াকে স্থান দেবে ছাত্ররা। তাদের রাজনীতির মূল দৃষ্টিভঙ্গি হবে পড়ালেখা। ছাত্রলীগের পুনর্মিলনীতে এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়ে আমরা বলতে চাই, ছাত্রলীগসহ সব ছাত্র প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে চলুক। পড়ালেখা করে নিজেকে ভবিষ্যতের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগী হোক। শিক্ষা হল সবচেয়ে বড় সম্পত্তি। একে কেউ হাইজ্যাক বা লুট করে নিতে পারে না- প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো উপায় নেই। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ খারাপ খবরের শিরোনাম না হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য কেবল শুক্র ও শনিবার র্যালি-মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এগুলো ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। তবে ঘোষণা ও শপথে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে। সেই দায়িত্ব এখন ছাত্রলীগের কাঁধে। কারণ এর আগে নানা ধরনের আহ্বান-নির্দেশনা বহুবার দেয়া হলেও বাস্তবায়নের নজির নেই বললেই চলে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীত আছে। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান অবিস্মরণীয়। তখন ছাত্ররা পড়ালেখার পাশাপাশি জাতীয় প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়ত। কোনো মানুষ বিপদে পড়লে ছাত্রদের কাছে যেত; কিন্তু এখন রাজনৈতিক ছাত্রকর্মীরা সাধারণভাবে হয়ে পড়েছে পেশিশক্তি ও ক্ষমতার স্বার্থের হাতিয়ার। ছাত্রনেতারাও বৈষয়িক ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত। ফলে ছাত্রদের দেখলে মানুষ আগের মতো তাদের কাছে ভেড়ে না। এর দায় যেমন ক্ষমতাসীনদের, তেমনই দেশের সব ছাত্র সংগঠনও তা এড়াতে পারে না। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগকে লেখাপড়া, জ্ঞান বিতরণ ও নেতিবাচক কাজ থেকে মুক্ত থাকার উপদেশ দিয়েছেন। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজিতে বেশি জড়ায়, তাই এর তাৎপর্য আছে বৈকি।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও নিজেদের প্রতিজ্ঞার ওপর অটল থেকে জনবান্ধব ও ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবে ছাত্রলীগ। হানাহানি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মতো ন্যক্কারজনক কাজে ভবিষ্যতে জড়িত হবে না। লেখাপড়া ও শিক্ষাসংক্রান্ত কল্যাণমূলক কাজে তারা মনোযোগী হবে। আবার সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কেবল নির্দেশনা প্রদানই যথেষ্ট নয়, ছাত্রদের সুষ্ঠু ও ইতিবাচক রাজনীতির সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যায় করলে দলীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য ডাকসুসহ সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা যেতে পারে। এটা তো সবারই জানা, ডাকসু আমাদের অনেক জাতীয় নেতা উপহার দিয়েছে। শিক্ষা তথা জাতির সামগ্রিক স্বার্থে ছাত্র সংসদগুলো আবারও ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এতে ছাত্র সংগঠনের মুখোমুখি অবস্থান এবং দ্বন্দ্বও কমে আসতে পারে।
দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার পেছনে ছাত্র সংগঠনগুলো বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠনের ভূমিকাই প্রধানত দায়ী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ছাত্রলীগ পরিবর্তনের সূচনার চেষ্টা করলে দেশের রাজনীতির চেহারা বদলে যাবে বলে আশা করাই যায়। সংগঠনটি নিজেদের শপথ ও সরকারপ্রধানের নির্দেশনা মেনে চলবে- এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.