কেবল দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নয়, মালয়েশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশ থেকেও ফ্লাইওভার ও সড়ক নির্মাণ ব্যয় বাংলাদেশে বেশি। বিষয়টা উচ্চমহলের জানা থাকলেও ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি। জনগণের করের অর্থের এমন অপচয় উদ্বেগের বিষয়ই বটে। আবার বেশি টাকা ব্যয় করে দেশে মানসম্মত ও টেকসই ফ্লাইওভার, সড়ক ও সেতু যে তৈরি হচ্ছে, তাও নয়। ভারত, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে আমাদের অর্ধেক খরচে আরও বেশি মজবুত ও টেকসই ফ্লাইওভার, সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। জানা গেছে, নির্মাণসামগ্রী ও শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলক কম হওয়ার পরও বাংলাদেশে এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণে গড়ে ব্যয় হচ্ছে ১২৩ থেকে ২৫০ কোটি টাকা। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, চীন এমনকি মালয়েশিয়াতে এ ব্যয় আমাদের অর্ধেকেরও কম। বলাই বাহুল্য, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, শ্রমিকের মজুরি ও নির্মাণসামগ্রী সবকিছুতেই তাদের ব্যয় আমাদের চেয়ে ওপরে। তারপরও ব্যয়ের এত তারতম্য। আমাদের দেশে নির্মাণ ব্যয় তাদের চেয়ে দ্বিগুণ কেন- এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের পেছনে যেসব কারণ বেরিয়ে এসেছে তা হল, প্রকল্পের মেয়াদের নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু ও যথাসময়ে শেষ করতে না পারা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, জবাবদিহিতা না থাকা ও সবক্ষেত্রে সুশাসনের অভাব। এর বাইরে দুর্নীতি তো অন্যতম সমস্যা হিসেবে রয়েছেই। গুজব আছে, দেশে কোনো প্রকল্প নেয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের মাসোহারার ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়। এছাড়া ঋণনির্ভরতাও প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ। আমরা মনে করি, বিদেশী ঋণনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব অর্থায়ন তথা দেশীয় উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ, সুশাসন ও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। যুগান্তরেই খবর বেরিয়েছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত তৃতীয় বছরেও তা শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তা-ও অনিশ্চিত। একই ঘটনা ঘটেছে দেশের সবচেয়ে বড় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও। শুরুতে কিলোমিটার প্রতি ১১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও বারবার সময় বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ২৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ ভারতে মাত্র ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণেরও নজির আছে। উদ্বেগের বিষয়, জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকার এমন নয়ছয়ের পরও নীতিনির্ধারকদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ফলে সন্দেহের উদ্রেক হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, এতে অনেকের পকেটভারি ও কমিশন বাণিজ্যের মতো শুভংকরের ফাঁকির বিষয় জড়িত। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত কত খরচ হয় তাই দেখার বিষয়। আমাদের প্রত্যাশা, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ফ্লাইওভার, সড়ক ও সেতু নির্মাণের বরাদ্দের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের ব্যয়ের নজির পর্যালোচনা করবে। অন্যথায় ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদীরা জনগণের অর্থ লুটপাট করেই যাবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.