আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণ, উন্নয়ন ব্যয় বাস্তবায়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসকাবে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭-এর আইবিএফবির প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান এ কথা বলেন।
আইবিএফবি সভাপতি হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘জাতীয় বাজেটের আকার বড় হওয়া অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতা অর্জনের পরিচায়ক। ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবের সক্ষমতা অর্জন নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। সরকারের রূপকল্প-২০২১ অর্জন ও মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে সহায়ক হবে।’
বিনিয়োগ চিত্র তুলে ধরে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি বিনিয়োগ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ২২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৪ শতাংশে এসেছে। কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারী বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৭ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন।’ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগের হার কমপক্ষে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা দরকার। অন্যদিকে বিগত ২০১৪-১৫ এবং ২০১৩-১৪ সালে সংশোধিত বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়নের হার যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ৮৭ দশমিক ৪। বড় প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে সম্যস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত পণ্য ও সেবা উৎপাদন ব্যাহত হবে।’
হাফিজুর রহমান খান বলেন আরো বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রারর চেয়ে এবার প্রায় ৩৫ শতাংশের বেশি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। অপরদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিপি) সব উন্নয়ন ব্যয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া ভবিষ্যতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করা উচিত।’
সংবাদ সম্মেলনে আইবিএফবির কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে আছে, প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখা; বিদ্যমান ভ্যাট ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা, রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর প্রস্তাবিত ১ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা, ভ্যাটের পরিবর্তে আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া, বাজার অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দূর করা ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় এক লক্ষ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় সমাগ্রিক ব্যয়ের ৬৭ দশমিক ৫০ শতাংশ যার অর্ধেকের বেশী। যা প্রধান তিনটি খাতে যেমন : প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতে ব্যয় হবে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয়ের মাত্র ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি তরান্বিত করার জন্য সেদেশের বাজেটের কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা উচিত। তা না হলে আমাদের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে বলে জানানো হয়।
আইবিএফবি সভাপতি হাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলনে আইবিএফবির সহসভাপতি (অর্থ) হুমায়ুন রশিদ, পরিচালক মণ্ডলীর মধ্যে এম এস সিদ্দিকী, লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান, মোহম্মদ আলী দ্বীন, এরশাদ হোসেন রানা, ড. মো. মজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.