দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালরা দেশ ছেড়ে পালালেও দুর্নীতি থেকে রেহাই মিলছে না জাতির। আর এ কারণে মিলছে না বৈশ্বিক আস্থাও। অপরদিকে দুর্নীতির গর্ভ থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ, যা ব্যাহত করছে উন্নয়ন, বিপন্ন করছে জনজীবন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মিলেনিয়াম কর্পোরেশন (এমসিসি) উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান করে থাকে। মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডে যুক্ত হতে হলে ২০টি সূচকে অগ্রগতি অর্জন করে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। সেই ২০ সুচকের ১১টিতে বাংলাদেশ গ্রিন বা সবুজ তালিকায় থাকলেও ৯টি সূচকে রয়েছে রেড বা লাল তালিকায়। সূচকগুলো হচ্ছে- দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজনীতি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান, বাণিজ্য নীতিমালা, জমির অধিকার ও প্রাপ্যতা, ঋণ প্রাপ্তির সূচক, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা।
লাল তালিকাভুক্ত এসব সূচক সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দুর্নীতির শর্তের মধ্যে সুশাসনকে ধরা হয় সবার আগে। একে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও অন্যান্য সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান সন্তোষজনক নয়। জমিজমার মামলা যুগের পর যুগ কোর্টে ঝুলে থাকছে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেখানে জিডিপির ৪-৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে, সেখানে বাংলাদেশ এখনও ১ শতাংশের নিচে। প্রাথমিক শিক্ষা খাতেও বাংলাদেশের বরাদ্দ ১ শতাংশের সামান্য বেশি। বন ধ্বংস, নদী দখল-দূষণ, মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তপ্রায়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থতা- এসব কারণে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অবস্থান করছে। ফলে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের এমসিএফ ফান্ডের অনুদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের ভাগ্যে।
গণমাধ্যমগুলো অবিরাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ এবং সম্পাদকীয় মতামত প্রকাশ করে এলেও দেশে দুর্নীতির কর্মকাণ্ডে কোনো ছেদ নেই। অবস্থা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পর্যন্ত এ ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী স্বয়ং নিরুপায় হয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর দেশের জিডিপির ২-৩ শতাংশের ক্ষতি হয়ে থাকে। দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে বিরাজ করছে। দিন দিন তা না কমে বরং বাড়ছে। এসব উক্তির ভেতর সত্য আছে, তবে সম্পূর্ণ সত্য নেই। কারণ এমসিসির মূল্যায়নে ১১টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার কথা রয়েছে। অর্থাৎ খাতা কলমে অর্ধেকের একটু বেশি হলেও বাংলাদেশ সবুজ তালিকায়ও আছে। লাল তালিকা থেকে বেরিয়ে আসাও অসাধ্য নয়। তাই হাল ছেড়ে দেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। হাল ধরে থাকতে হবে, বাইতে হবে বৈঠাও। আর সেটা সম্ভব হবে তখনই, যখন দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে দুর্নীতির প্রতিকারে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাংলার কৃষক দুর্নীতি করে না, বাংলার শ্রমিক দুর্নীতি করে না- এটাই সত্য। তাই যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের আর ছাড় না দিয়ে শাস্তি প্রদানের জন্য দুদক দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে যেমন রেড অ্যালার্ট জারি করেছে, তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.