বরাবরের মতো এবারের বইমেলাতেও বাংলা কবিতায় তরুণদের অংশগ্রহণ প্রশংসার দাবি রাখে। সময়ের সাথে সাথে ভাষার ছক কিংবা সাহিত্যের ছক যেমন করে বদলে যায় তেমনি করে বদলে যায় তরুণরাও। তরুণদের কেউ কেউ সাহিত্যের জন্য হয়ে ওঠে অনিবার্য। তাই সবক্ষেত্রেই তরুণদের অংশগ্রহণ অনিবার্য।
বর্তমানে বাংলা কবিতায় যেকজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কবি রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অহ নওরোজ নামটি দিনে দিনে বেশ পরিচিত হয়ে উঠছে। কবিতায় সাবলীলতা ও শব্দ চয়নে বিশেষত্ব নিয়ে এরই মধ্যে তরুণদের মধ্যে বেশ আলোচিত হয়ে উঠছেন তিনি। এবার বইমেলায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রোমন্থনের সনদ’ প্রকাশিত হয়েছে। তরুণ এই কবির কাব্যভাবনা এবং সমসাময়িক বিষয়ের ওপর আলাপ থাকছে আজকের আয়োজনে।
প্রশ্ন : বইমেলায় কি প্রতিদিন আসছেন?
অহ নওরোজ : প্রায়ই আসছি। বই দেখছি। নতুন বই দেখার সাথে সাথে প্রতিদিনই নতুন নতুন অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে।
প্রশ্ন : কোন বইগুলো সব থেকে বেশি টানে আপনাকে?
অহ নওরোজ : কবিতার বই তো সবসময়ই আমাকে একটু বেশি টানে। অন্য বইও দেখছি। ঘুরছি, মাঝে মধ্যে দু-একটা বই কিনছি। তবে আড্ডা হচ্ছে বেশ।
প্রশ্ন : কবিতার প্রতি টানটা শুরু কবে থেকে? কখন থেকে ভাবলেন কবিতা লিখবেন?
অহ নওরোজ : এই টানটা অজানা থেকেই শুরু হয়েছিল। আমি যখন ছোটবেলায় বাংলা বই পড়তাম তখন সুন্দর শ্রুতিমধুর শব্দগুলো আমাকে টানত। শব্দগুলো কেমন যেন আয়না হয়ে উঠত। আমি তখন সুখ পেতাম। শব্দগুলো মনে আওড়াতাম। মূলত শব্দের প্রতি ভালোবাসা থেকেই কবিতা শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই অনেক পড়া শুরু করলাম। মনের মধ্যে কোনো বোধ জন্ম নিলে সেগুলো ভালো শব্দ পেলে কবিতা হয়ে বেরিয়ে যেত। এই তো এভাবেই শুরু।
প্রশ্ন : বইমেলায় আপনার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রোমন্থনের সনদ’ এসেছে। এই কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে একটু জানতে চাই।
অহ নওরোজ : আমরা এমনিতেই রোমন্থনে অভ্যস্ত, কখনো কখনো মনের অজান্তেই রোমন্থন করতে শুরু করে দেই। স্মৃতি রোমন্থন করে কখনো কষ্ট, কখনো সুখ পাওয়া যায়। রোমন্থনের অনুভূতি সবসময়ই আলাদা। কবিতাগুলোতে এই সুযোগ রয়েছে বলে এমন নাম করা হয়েছে। আমি জানি না নামকরণের সার্থকতা কতটুকু। পাঠকরাই বিবেচনা করবেন। তবে আশা করি সবাই কিছু না কিছু রোমন্থন করতেই পারবেন।
এনটিভি : দেখলাম আপনার বইয়ের প্রচ্ছদ করেছে স্লোভেনিয়ান শিল্পী ওলগা জেহাফ, বাহিরের শিল্পী দিয়ে প্রচ্ছদ করালেন কেন?
অহ নওরোজ : বেশ কিছু দেশের কবি এবং শিল্পীদের সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে। আমার বইয়ের নাম যখন ঠিক হয় তখন ভাবলাম এবারের প্রচ্ছদটা একটু ভিন্ন ধরনের করা যায় কি না। এর মধ্যে ওর সাথে কথা হলো, সে পঞ্চাশোর্ধ্ব স্লোভেনিয়ার একজন নামকরা শিল্পী। তাকে বলার পর সে অনেক খুশি হলো এবং ইংরেজিতে কবিতা পাঠাতে বলল, আমি পাঠালাম। পরে প্রচ্ছদ করে দিয়েছে। তারপর বই মেলায় চলে এলো। এবারের বই আলোচনায় আসার পেছনে প্রচ্ছদটিও কিছুটা কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন : আপনার কী মনে হয়? তরুণ লেখকরা মেলায় কতটুকু মূল্যায়ন পাচ্ছেন?
অহ নওরোজ : তরুণরাই মূলত বইমেলার মাধ্যমে নতুন যাত্রা শুরু করে। তবে তরুণদের নিয়ে কেউ আগ্রহ দেখায় না এটা মানতে সবসময়ই খুব কষ্ট। অধিকাংশ কবিতার পাঠক দেখি কবিতার বই কিনতে গিয়ে কবির নাম দেখে। দু-চারটে কবিতা পড়ে দেখতে যেন তার সময়টুকু নেই। কিন্তু অনেক তরুণ কবি আছেন যাঁরা দুর্দান্ত লিখছেন। তাঁদের যদি যাচাই না করা হয় তাহলে নতুন কিছু কি পাওয়া সম্ভব? তরুণদের না পড়লে তারা কীভাবে পুরাতন হবে। তরুণদের প্রতি এই অবমূল্যায়ন আমাকে আহত করে।
প্রশ্ন : অনেকেই বলছে বইগুলো মেলাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে, এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
অহ নওরোজ : তারপরও কিন্তু একটা উপলক্ষে মানুষ বই কিনছে। নতুন বই দেখছে। বইয়ের সমারোহ তৈরি হচ্ছে। তবে মেলাকেন্দ্রিক হওয়াটাও ঠিক নয়। বই সারাবছরই বের হবে। এর জন্য অবশ্য প্রকাশক এবং লেখকদের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো পৌষ পার্বণের কমতি নেই। প্রত্যেক উৎসবে বই বের করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন পহেলা বৈশাখ হিসেবে বই প্রকাশিত হলো। তাহলে সারাবছরই নতুন বই প্রকাশ হতে থাকল। আর এই খবর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাংবাদিক ভাইয়েরা উদ্যোগ নিলে হয়তো আমরা মেলাকেন্দ্রিক থাকতাম না।
প্রশ্ন : প্রকাশকদের কাছে তরুণ লেখকরা কতটুকু মূল্যায়ন পাচ্ছে?
অহ নওরোজ : বেশির ভাগ প্রকাশক একেবারে ব্যবসায়ী। তার যে বইটি দিয়ে অনেক ব্যবসা হবে সে সেটি নিয়েই পড়ে থাকে। তরুণদের যাচাই-বাছাই করেও সুযোগ দেওয়া যেতে পারে এ বিষয়েও তারা উদাসীন। কিন্তু শিল্পসাহিত্যের জায়গাতে কি এমন করা ঠিক? তরুণরা ভালো লেখেন কিন্তু তাদের লেখাগুলো পাঠক পাচ্ছে না। পাঠক বঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমি শুধু প্রকাশকদেরই বলব না, পাঠকদেরও বলব, যাচাই-বাছাই করে একটি হলেও তরুণ লেখকের বই কিনুন। তাহলে তরুণদের মূল্যায়নটা বাড়বে। তাদের হতাশাটা কমে আসবে। এই হতাশার কারণেই অনেক উঠতি তরুণদের আমরা হারাচ্ছি। এটা কখনই কাম্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার নতুন গ্রন্থের জন্য শুভেচ্ছা। এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অহ নওরোজ : এনটিভি পরিবারকেও আমার পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমার বইটি প্রকাশ করেছেন ‘কবি প্রকাশনী’। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯ নম্বর স্টলে এবং লিটলম্যাগ চত্বরে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.