স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। এর নির্মাণকাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়ে চলছে। বুধবারের যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের কারখানায় তৈরি সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের প্রথম চালানটি ইতিমধ্যে মংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আশা করা যায়, আর কয়েক মাস পরই বিশেষভাবে দৃশ্যমান হবে এ প্রকল্পের কাজ।
এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে। বস্তুত এতে পরোক্ষভাবে সারা দেশের মানুষই বিশেষভাবে উপকৃত হবে। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী- এসব এলাকায় নতুন করে শিল্পায়ন হবে। এতে ওই অঞ্চলের অনেক মানুষ রাজধানীর পরিবর্তে ওই অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থানের চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন রকম শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে তা দেশের জিডিপিতে অবদান রাখবে। এ সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাতায়াত ব্যবস্থাও সুগম হবে। বর্তমানে বরিশালের কোনো যাত্রীর রাজধানীতে আসতে যতটা সময় লাগে, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে ওই সেতুর ওপর দিয়ে তিনি অর্ধেক সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। এখন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা কত সময়ে রাজধানীতে এসে পৌঁছাতে পারবেন এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে ওই অঞ্চলের যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পদ্মা সেতু হলে এ দুর্ভোগের অবসান হবে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে আধুনিক প্রযুক্তির যেসব বুলেট ট্রেন চালু রয়েছে, সেই ট্রেন বাংলাদেশে চালু হলে আরও কম সময়ে ঢাকা থেকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। বর্তমানে মংলা সমুদ্র বন্দরের অনেকটাই অব্যবহৃত পড়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে মংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কলকাতা-আগরতলা রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এতে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ বিশেষভাবে উপকৃত হবে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু এ সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাকযোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর অনেকেরই আশংকা ছিল এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। সব আশংকা অমূলক প্রমাণ করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করছি, যথাসময়েই এর কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রেল ও সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহ করা সহজ হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল প্রকৌশলীরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক হলেও এ প্রকল্পে বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের দেশের অনেক প্রকৌশলী ও কর্মী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বড় প্রকল্প আমাদের প্রকৌশলীরাই সম্পন্ন করতে পারবেন। এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি দেখে এ দেশের জনগণের মনোবল আরও বাড়বে। এটি আরও বড় কাজে সাফল্যের প্রেরণা জোগাবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.