কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে এক মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে দেশে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম আট লেনবিশিষ্ট মহাসড়ক উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া এবং পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেন প্রকল্পের (পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক) আপগ্রেডেশন কাজেরও উদ্বোধন করেছেন তিনি গতকাল। স্মরণ করা যেতে পারে, গত ঈদের আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়কের উদ্বোধন হয়েছে। গতকালের উদ্বোধনের পর পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হবে। ওদিকে আট লেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের যাতায়াত হবে আরও সহজ।
আমরা লক্ষ্য করছি, দেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক ধরনের বিপ্লব সংঘটিত হয়ে চলেছে। পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প ছাড়াও এখানে-সেখানে যোগাযোগ খাতে কাজ চলছে ছোট-বড়-মাঝারি প্রকল্পের। পৃথিবীর অন্যতম একটি বড় আবিষ্কার হল চাকা। এই চাকাই পৃথিবীটাকে ছোট করা শুরু করেছে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই। চাকাকে অন্যতম সেরা অবিষ্কার ধরা হয় এজন্য যে, যোগাযোগ উন্নয়নের এক বড় পূর্বশর্ত। বর্তমানকালে তো কানেকটিভিটি এক বহুল উচ্চারিত শব্দ। দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা যে দেশের যত উন্নত, সেই দেশ ততই সর্বক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেদিক থেকে বর্তমান সরকার যোগাযোগ খাতে যে মনোযোগ দিয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য।
যোগাযোগ খাতে আমরা এরশাদ সরকারের আমলে বড় ধরনের কর্মচাঞ্চল্য দেখেছিলাম। এরপর এ খাতে অগ্রগতি হয়েছে বটে, তবে বর্তমান সময়ে যা হচ্ছে তা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এখন দৃশ্যমান। বিশ্বব্যাংককে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই মেগা প্রকল্পে হাত দেয়া ছিল বর্তমান সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর এক মহৎ উদ্যোগ। সেই উদ্যোগ পরিণতি পাওয়ার অপেক্ষায় এখন। এই সেতু চালু হওয়া মানে উন্নয়নের দিকে তা এক বড় লম্ফ। রাজধানীর জীবনযাত্রা সহজ করার জন্যও অনেক প্রকল্প এগিয়ে চলেছে এবং মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
উন্নয়নের আরেকটি বড় শর্ত হল বিদ্যুৎ। আমরা দেখলাম গতকালই ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে ৬টি উপজেলার একশ’ ভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ এক রাজযোটক বৈকি। একদিকে যোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, অন্যদিকে বিদ্যুৎ- দুয়ে মিলে বড় কাণ্ডই ঘটাবে আশা করা যায়। আমরা আশা করব, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। সারা দেশের মানুষ একদিন সহজ যোগাযোগ ও বিদ্যুতের নেটওয়ার্কের অধীনে চলে আসবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ অপরাপর দেশের সঙ্গে কানেকটিভিটিও যে দিন দিন বেগবান হবে, সে ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.