শিক্ষা বোর্ডসমূহের ফলাফলে ক্ষমার অযোগ্য এমন সব অন্যায় ধরা পড়ছে, যা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকসহ সবাইকে হতবাক করে তুলছে। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নিয়ম অনুযায়ী বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী তাদের ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছিল। পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেল, ১৬৫২ শিক্ষার্থীর ফল পাল্টে গেছে এবং নতুন ফলাফলে আবেদনকারীদের ২৫ শতাংশ, যাদের অনুত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল, উত্তীর্ণ হয়েছে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। পুনঃনিরীক্ষণের পর পাস করেছে ৭৮৯ শিক্ষার্থী। এ বছর পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের পর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮১১ জন, এইচএসসিতে এ সংখ্যা ২৩০। অত্যাশ্চর্য, ২০১২ সালে শরীফুল আলম নামের এক শিক্ষার্থীকে প্রথম ফলে অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়েছিল, পুনঃনিরীক্ষণের পর সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে, ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণে চারটি দিক দেখা হয়। প্রথমত, কোনো প্রশ্নের উত্তরে নম্বর দেয়া না হলে তা দেয়া। দ্বিতীয়ত, সব প্রশ্নের উত্তরে দেয়া নম্বর যোগ করতে ভুল হলে তা সংশোধন করা। তৃতীয়ত, প্রাপ্ত নম্বর মেশিন রিডেবল ফরমে তুলতে ভুল হয়েছে কিনা তা যাচাই করা এবং চতুর্থত, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাট হয়েছে কিনা তা দেখা। কথা হচ্ছে, উপরের সব ভুলই টেকনিক্যাল, উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয়েছে কিনা তা নয়। প্রথমে এদিকটারই নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। কেন এই ভুল? বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর হিসাব রাখতে হয় বলে? তাহলে তো ব্যাংকগুলোর প্রতিনিয়তই ভুল হওয়ার কথা, কারণ সেখানে লাখ লাখ গ্রাহকের যাবতীয় হিসাব ও তথ্য সামাল দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, কোনো উত্তরে নম্বর না দেয়া কিংবা সব উত্তরে দেয়া নম্বর যোগ করার সময় ভুল করছেন যেসব পরীক্ষক, তাদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে? এ গেল টেকনিক্যাল ভুলের কথা, সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, ছাত্রছাত্রীদের উত্তরপত্র কি যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের ব্যবস্থা কী? সেই ব্যবস্থা তো রাখা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষকের কারসাজিতে যোগ্য শিক্ষকরা উত্তরপত্র মূল্যায়নের সুযোগ পান না। স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে অযোগ্যদের কিছু বাড়তি আয় করে দেয়ার লক্ষ্যে তাদেরই খাতা দেখা হয়। সেই আয় থেকে তারাও নিশ্চয়ই কিছু ভাগ পান। ব্যবহারিক পরীক্ষায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে নম্বর কম-বেশি দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতি বছর। খাতা মূল্যায়নের জন্য যে সময় দেয়া হয়, তা-ও যুক্তিসঙ্গত নয়। এ ক্ষেত্রে যে কিছু নিয়ম-কানুন আছে, তাও মানা হয় না। এমন খবরও বেরিয়েছিল, শিক্ষক বাসের মধ্যে বসে পাবলিকলি খাতা দেখছেন।
ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল ভুলভাবে প্রকাশিত হলে অপরিসীম বিপর্যয় ঘটে। এমনও দেখা গেছে, ফেল করে ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া তো সাধারণ ঘটনা। উদ্বেগের বিষয় হল, দু’চার-দশজন নয়, সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রীর কৃতকার্যতাকে অকৃতকার্যতা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এ ভুল কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়াতেই হবে। প্রয়োজনে পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনে পুরো বিষয়টাকে শৃংখলাবদ্ধ করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.