ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হলো অষ্টম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। এর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। পাঁচটি দেশেরই রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা যোগ দিয়েছিলেন এ সম্মেলনে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোকেও। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এসব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও যোগ দিয়েছিলেন এ সম্মেলনে। ফলে এবারের সম্মেলনে ব্রিকসের বিভিন্ন এজেন্ডার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে। ব্রিকস ও বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোতে মানসম্পন্ন অবকাঠামো তৈরি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য দুই জোটের মধ্যে সংলাপ আয়োজন। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উন্নয়নের একটি প্রধান অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি এ ক্ষেত্রে দুই জোটের দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির এক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ব্রিকসের জন্ম। পাশ্চাত্য জোটের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাওয়াই ছিল এ জোটের মূল লক্ষ্য। বিশ্বব্যাংকের আদলে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেয় জোটটি। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জোটের লক্ষ্য অর্জনে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এবারের সম্মেলনে সব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর বেশির ভাগই এখনো উন্নয়নশীল। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই গঠিত হয়েছিল বিমসটেক বা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন। কিন্তু এখানেও অর্জন খুবই কম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী দুই জোটের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা গড়ে তোলা গেলে তাতে জোটভুক্ত সব দেশই উপকৃত হবে। উভয় জোটের নেতারা তেমনি সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সম্মতও হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্রিকসই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর একটি উদ্যোগ। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বে শোষণ বজায় রাখার যে অপচেষ্টা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে তা থেকেও মুক্তি দিতে পারে এই জোট। কিন্তু জোটের কার্যক্রমের ধীরগতি তাঁদের অনেককেই হতাশ করছে। এ অবস্থায় আমরাও আশা করি, অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ কাটিয়ে বৃহত্তর কল্যাণের পথে এগিয়ে যাবে এই জোট এবং অষ্টম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে জোটের কার্যক্রমে প্রত্যাশিত গতিসঞ্চারে তারা সক্ষম হবে। সেই সঙ্গে বিমসটেকের সংযুক্তি এ জোটকে বৃহৎ পরিসরে আরো কার্যকর ও গতিশীল একটি বৈশ্বিক উদ্যোগে পরিণত করবে, এমনটাই প্রত্যাশিত।