বাংলাদেশ কি সত্যি সত্যি সব সম্ভবের দেশে পরিণত হয়েছে? অত্যাশ্চর্য, উচ্চ আদালতের দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে জামিন নেয়া হয়েছে বিপুলসংখ্যক ইয়াবা মামলার এক আসামির, সাড়ে ২৯ কেজি স্বর্ণ চোরাচালানের মামলায় নেয়া হয়েছে স্থগিতাদেশ। গত বছরের মে মাসে নিজস্ব বেডরুম থেকে ১৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সাকের নামের এক ব্যক্তি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এত অধিক সংখ্যক ইয়াবা মামলায় কোনোভাবেই জামিন পাওয়ার কথা নয়; কিন্তু তিনি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন! একইভাবে এ বছরের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি বাজারের দুটি জুতার গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ২৯ কেজি ওজনের ২৫০টি সোনার বার। পরদিন গুদামটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ইয়াবা মামলার আসামির মতো একই দিনে হাইকোর্টের একই বেঞ্চের বিচারপতিদ্বয়ের স্বাক্ষর জাল করা আদেশে মামলাটির কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। কীভাবে সম্ভব হল এই দুটি অপকর্ম? ওইদিন মামলা দুটি আদালতের কার্যতালিকায় ছিল না, পিয়ন বই বা রেজিস্টারেও নম্বর উল্লেখ নেই। আদালতে শুনানিও হয়নি, অথচ আদেশ পাওয়া গেছে! এ কি ভৌতিক কাণ্ড? বিচারপতিদ্বয় তাদের জাল স্বাক্ষর দেখে বিস্মিত হয়েছেন, খবরটি পড়ে বিস্মিত হয়েছে দেশবাসীও। নথিপত্র ঘেঁটে স্বাক্ষর জালের প্রমাণ পাওয়ার পর অবশ্য আদেশ দুটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে, তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। বর্তমান বাংলাদেশে আমরা যেদিকে তাকাই, সেদিকেই ব্যাপকহারে দেখতে পাই ভেজাল, নকল আর জাল। বিশুদ্ধতা যেন দিন দিন উঠে যাচ্ছে দেশ থেকে। কিন্তু আদালত, তা-ও আবার উচ্চ আদালতের বিচারকদের স্বাক্ষর জাল করে আসামি বেরিয়ে যাবে অথবা মামলার কার্যক্রম স্থগিত হবে, ভাবাই যায় না। প্রশ্ন করাই যেতে পারে, তাহলে আর অবশিষ্ট থাকল কী? প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করার ঘটনাও জেনেছিলাম আমরা। মন্ত্রী-এমপিদের স্বাক্ষরও জাল হয়। বাংলাদেশে অপরাধ কি তাহলে প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে যাচ্ছে? বিচারপতিদ্বয় বলেছেন, স্বাক্ষর দেখে মনে হয় আমাদেরই স্বাক্ষর। অর্থাৎ অপরাধীরা এত নিখুঁতভাবে স্বাক্ষর জাল করেছে যে, তা বিচারপতিদের স্বাক্ষরের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। অপরাধ কি তাহলে শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেল?
হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার যুগান্তরকে বলেছেন, স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে; তদন্তে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর যারাই জড়িত বলে শনাক্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। আমরাও চাই, জালিয়াতি বা জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দ্বিতীয় যে কথা, বিচারপতিরা যখন কোনো স্বাক্ষর করবেন, তারা যদি কোথায় স্বাক্ষর করছেন, তা পুংখানুপুংখভাবে যাচাই করেন, তাহলে ভুল কাগজে স্বাক্ষর করার সুযোগ থাকবে না। এটা এজন্যই বলা যে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, অসম্ভব চাপের মধ্যে সবসময় ফাইল দেখে বিচারপতিদের স্বাক্ষর করা সম্ভব হয় না। যাহোক, আদালত চত্বরকে সব ধরনের জালিয়াতি থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবার ঘাড়েই বর্তায়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.